বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান নোবেলজয়ী প্রফেসর মহম্মদ ইউনুস পদত্যাগের 'হুমকি' দিয়েছেন সম্প্রতি। বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনী সংস্কারের বিষয়ে একমত হতে ব্যর্থ। তবে এরই মধ্যে নির্বাচন নিয়ে চাপ বাড়ছে তাঁর ওপর। এরই সঙ্গে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব নিয়ে ইউনুসের সরকার আপস করেছে বলে অভিযোগ। কক্সবাজারে মার্কিন সেনার উপস্থিতি কিংবা মায়ানমার দিয়ে মানবিক করিডোর নিয়ে চলছে জোর বিতর্ক। এছাড়া সেন্ট মার্টিন দ্বীপ নিয়েও জল্পনার শেষ নেই। এর আগে হাসিনা অভিযোগ করেছিলেন, এই দ্বীপে নাকি আমেরিকা ঘাঁটি গড়তে চায়। এই আবহে সম্প্রতি বাংলাদেশি সেনা প্রধান ওয়াকার-উজ-জামান এই নিয়ে ডেডলাইন নির্ধারণ করে দিয়েছেন। এই আবহে ইউনুস পদত্যাগ করার কথা ভাবছেন বলে খবর মিলেছে। এই আবহে বাংলাদেশে ফের একবার রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও সামাজিক অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। এরই সঙ্গে শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তন নিয়ে জল্পনা-কল্পনাও আরও তীব্র হয়েছে। এদিকে ইউনুসের গ্রামীণ ব্যাঙ্ক এবং এর সঙ্গে যুক্ত অন্যান্য সংস্থাকে বিশেষ সুবিধা পাইয়ে দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে নোবেলজয়ী অধ্যাপকের বিরুদ্ধে। (আরও পড়ুন: শ্রীনগরগামী উড়ানের ২ ইন্ডিগো পাইলটকে গ্রাউন্ড করল DGCA, ওদিকে প্রশংসা মন্ত্রীর)
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের আগস্টে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার ১৫ বছরের সরকারকে ক্ষমতা ছাড়তে হয়েছিল। সরকারি চাকরি ও শিক্ষা ক্ষেত্রে সংরক্ষণ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে ছাত্ররা এই প্রতিবাদের আয়োজন করেছিল, যা পরে হিংসাত্মক সংঘর্ষে রূপ নেয়। আন্দোলন চলাকালে কয়েকশো মানুষ মারা যান এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারতে আশ্রয় নিতে হয়। এরপর সেনাবাহিনী একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করে এবং ইউনুসকে প্রধান উপদেষ্টা (প্রধানমন্ত্রীর সমপর্যায়ে) নিয়োগ দেয়।
এর পর একবছর যেতে না যেতেই ইউনূস সরকারও অসহযোগিতা, চাপ ও বিরোধিতার সম্মুখীন। এখন কার্যত সেনার সঙ্গেই তাঁর সংঘাতপূর্ণ সম্পর্ক বলে অনুমান করা হচ্ছে। এই নিয়ে সম্প্রতি বিবিসিকে ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টির (এনসিপি) নেতা তথা প্রাক্তন উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, 'স্যারকে (মহম্মদ ইউনুস) বিচলিত ও হতাশ দেখাচ্ছিল। রাজনৈতিক সমর্থন না পেলে কাজ করতে পারবেন না বলে জানান তিনি। জনগণ শুধু সরকার পরিবর্তনের জন্য আন্দোলন করেনি, বরং সিস্টেম পরিবর্তনের জন্য আন্দোলন করেছে। সংস্কার ছাড়া নির্বাচন করার কোনও মানে হয় না।' এদিকে ইউনুসের বিরুদ্ধে শুধুমাত্র নির্বাচন করানো বা সার্বভৌত্ব ক্ষুণ্ণ করাই নয়, ইউুসের বিরুদ্ধে তাঁর নিজের প্রতিষ্ঠানকে সুযোগ সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।
২০২৪ সালের ৮ অগস্ট বাংলাদেশের মসনদে বসেছিলেন ইউনুস। এরপর থেকে গ্রামীণ ব্যাঙ্ক এবং এর সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলি অন্যায্য সুবিধা পেয়েছে বলে অভিযোগ। এছাড়া ইউনুসের বিরুদ্ধে জালিয়াতির মামলা অস্বচ্ছ ভাবে দফারফা করা হয়েছিল। ঢাকায় ‘গ্রামীণ ইউনিভার্সিটি’ নামে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন দিয়েছেন ইউনুস। অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে এটাই প্রথম অনুমোদন প্রাপ্ত নয়া বিশ্ববিদ্যালয়। এ ছাড়া গ্রামীণ ব্যাঙ্কের কর মাফ করা হয়েছে ও সরকারিভাবে ব্যাঙ্কে শেয়ারের পরিমাণ ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। এদিকে ইউনুসের প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ এমপ্লয়মেন্ট সার্ভিসেস লিমিটেড লাভজনক জনশক্তি রফতানির লাইসেন্স পায়। গ্রামীণ টেলিকমের সাবসিডিয়ারি ‘সমাধান সার্ভিসেস লিমিটেড’ পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডার হিসেবে কাজ করার জন্য অনুমোদন পায়। বর্তমান পরিস্থিতিতে এই সব নিয়েও বাংলাদেশে জোর চর্চা, সমালোচনা চলছে।