গোয়ায় আয়োজিত হল 'সারফেস ওশন - লোয়ার অ্যাটমোসফিয়ার স্টাডি' (সোলাস)-এর নবম দ্বিবার্ষিক সম্মেলন। যার উদ্যোক্তা ছিল 'ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ওশনোগ্রাফি'।
অনুষ্ঠানের নাম দেখেই বোঝা যাচ্ছে, সমুদ্রপৃষ্ঠ এবং নিম্ন বায়ুমণ্ডল সম্পর্কে নানা ধরনের গবেষণা, সমীক্ষা ও তার ফলাফল নিয়ে আলোচনা করতেই এই আয়োজন।
আয়োজকদের ভাষায় বলতে হলে - এটি এমন একটি প্রকল্প, যার আওতায় গোটা বিশ্বের সামুদ্রিক এবং বায়ুমণ্ডলের মধ্যেকার বায়োজিওকেমিক্যাল এবং ফিজিক্যাল আদানপ্রদান ও তার প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা করা হয়।
আরও সোজাভাবে বললে - বিশ্বব্যাপী উষ্ণায়নের ফলে সমুদ্রে এবং বায়ুমণ্ডলে তার কী কী প্রভাব পড়ছে, সেই বিষয়ে এই অনুষ্ঠানে আলোকপাত করা হয়।
এই কর্মসূচিতে যোগ দেন জার্মানির কিয়েলের 'জিওমার হেমহোল্টজ সেন্টার ফর ওশন রিসার্চ'-এর প্রতিনিধি ক্রিস্টিয়ান মারাদিনো এবং আমেরিকার জর্জিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্ট অফ মেরিন সায়েন্সেস-এর প্রতিনিধি উইলিয়াম মিলার।
হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিনিধি সরাসরি এই দু'জনের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পান। তাতে উঠে আসে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য। যা উদ্বেগজনকও বটে!
বিশ্বব্যাপী সমুদ্রের উপর তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রভাব:
আমাদের প্রশ্ন ছিল - আজকের দিনে দাঁড়িয়ে আমরা জানি, পরিবেশে যে বিপুল পরিমাণ কার্বন ডাই অক্সাইডের নির্গমন ঘটে, তার একটা বড় অংশই সমুদ্রের জলের মাধ্যমে রিসাইকেল হয়। কিন্তু নানা মহলের আশঙ্কা, উষ্ণতা বাড়ার জেরে সমুদ্রের এই দ্রবণ ক্ষমতা ধীরে ধীরে কমছে। এটা কি সত্যি?
এর জবাবে উইলিয়াম মিলার যা জানালেন, তার মোদ্দা কথা হল - সংশ্লিষ্ট প্রকল্পটির আওতায় সামগ্রিকভাবে বায়ুমণ্ডল এবং সমুদ্রের মধ্যেকার সম্পর্ক নিয়ে গবেষণা করা হয়েছে। তাপামাত্রা, কার্বন ডাই অক্সাইড, তাপমাত্রার আদানপ্রদান, সমুদ্রের অম্লতা প্রভৃতি নিয়েও সমীক্ষা করা হয়েছে।
সেই সমীক্ষাতেই স্পষ্ট, এখনও পর্যন্ত বায়ুমণ্ডলের বেশিরভাগ কার্বন ডাই অক্সাইডই সমুদ্র শুষে নিয়েছে। কিন্তু, সমুদ্র নিজেও এক বিরাট সম্পদের উৎস। যে সমস্ত সম্পদ মানুষ নিয়মিত ব্যবহার করছে।
সমস্যা হল, মানুষের দ্বারা সম্পদের এই লাগাতার ব্যবহারের প্রভাব কেবলমাত্র সমুদ্রেই আটকে নেই। সেই প্রভাব পরিবেশের সর্বত্রই ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু, স্থান ভেদে সেই প্রভাবের মধ্যে তারতম্য রয়েছে। কারণ, বিশ্বের সর্বত্র প্রকৃতি ও মানুষের মধ্যেকার আচরণ সমান নয়।
ফলত - দক্ষিণ আটলান্টিক বা দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরে এর যা প্রভাব পড়বে, ভারত মহাসাগরে তার প্রভাব আলাদা হবে।
ভারত মহাসাগর নিয়ে উদ্বেগ:
এই জায়গাতেই আমাদের প্রশ্ন ছিল, ভারত মহাসাগর নিয়ে আলাদা করে কোনও উদ্বেগের কারণ রয়েছে কি?
এর উত্তরে ক্রিস্টিয়া মারাদিনো যা বললেন, তা সত্যিই উদ্বেগের। তাঁদের গবেষণার ফল বলছে - ভারত মহাসাগর আদতে বিশ্বের অন্যান্য সমুদ্রগুলির তুলনায় দ্রুত গরম হচ্ছে। শুধু তাই নয়। যে জলীয় বাতাসপূর্ণ মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে ভারতীয় স্থলভাগে বৃষ্টিপাত হয়, সেই বর্ষার যাতায়াতের জেরেই দূষিত বায়ু ভারত মহাসাগরে পৌঁছে যাচ্ছে।
পরবর্তীতে, সেই দূষণের উপাদানগুলি ভারত মহাসাগরের জলে মিশছে এবং তারও পরে যখন আবারও ভারত মহাসাগরের উপর মেঘ সৃষ্টি হচ্ছে, সেই মেঘের মাধ্যমে ওই দূষিত পদার্থ বায়ুমণ্ডলে ছড়িয়ে পড়ছে।
আরও একটি বিষয় নিয়েও ক্রিস্টিয়া উদ্বেগ প্রকাশ করেন, তা হল - ভারত মহাসাগরের নমুনা সংগ্রহ করে গবেষণা চালানো নিয়ে যথেষ্ট অনীহা রয়েছে। যার জেরে অন্যান্য সমুদ্রের তুলনায় ভারত মহাসাগর সম্পর্কে প্রাপ্ত তথ্যভাণ্ডার যথেষ্ট কম।
আরও সমস্যা হল, ভারত মহসাগরের তলদেশ বিশ্বের অন্যান্য সামুদ্রিক অঞ্চলের তলদেশ থেকে আলাদা। এই অবস্থায় পর্যাপ্ত তথ্য না থাকায় ভারত মহাসাগরে ঘটতে পারে, এমন কোনও ঘটনা সম্পর্কে আগাম সতর্ক বা সচেতন হওয়াটাও তুলনামূলক কঠিন।