সুপ্রিম কোর্টে স্বস্তি পেলেন অশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আলি খান মাহমুদাবাদ। অপারেশন সিঁদুর নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় আপত্তিকর পোস্ট করার অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছিলেন অশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক।দীর্ঘ টানাপোড়েনের পর বুধবার তাঁর শর্তসাপেক্ষে অন্তর্বর্তী জামিন মঞ্জুর করেছে সুপ্রিম কোর্ট। তবে মামলার তদন্তে স্থগিতাদেশ দিতে অস্বীকার করেছে আদালত। বরং হরিয়ানা সরকারকে এই বিষয়ে তদন্তের জন্য একটি সিট গঠনের নির্দেশ দিয়েছে। পাশাপাশি শীর্ষ আদালতের প্রশ্ন, প্রত্যেকের মত প্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে, কিন্তু অধ্যাপকের হঠাৎ এমন 'সস্তার পাবলিসিটি' দরকার হল কেন?
বিচারপতি সূর্যকান্ত ও বিচারপতি এন কে সিং-এর বেঞ্চ অধ্যাপক মাহমুদাবাদকে জামিনে স্বস্তি দিলেও তাঁর মন্তব্যের সময় নিয়ে কড়া সমালোচনা করেন। বুধবার বিচারপতি সূর্যকান্ত এবং বিচারপতি এন কে সিংয়ের বেঞ্চে হাজির হয়ে মাহমুদাবাদের মামলার পক্ষে যুক্তি দেন প্রবীণ আইনজীবী কপিল সিব্বল।
জবাবে বিচারপতি সূর্য কান্ত বলেন, 'সকলেরই বাকস্বাধীনতা এবং মত প্রকাশের অধিকার আছে। কিন্তু এখন কি এই সব নিয়ে কথা বলার সময়? দেশ ইতিমধ্যেই এই সবের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। দানব এসে আমাদের জনগণকে আক্রমণ করেছে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। এইসব অনুষ্ঠানে সস্তা জনপ্রিয়তা পেতে কেন অপারেশন সিঁদুরকে ব্যবহার করা হচ্ছে?'
এরপরেই সিব্বল জোর দিয়ে বলেন, অধ্যাপকের সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টের কোনও অপরাধমূলক উদ্দেশ্য নেই। জবাবে বিচারপতি সূর্যকান্ত উত্তর দেন, 'আপনার জানা উচিত কী ঘটছে। বাকস্বাধীনতার অধিকার আছে সবই ঠিক, কিন্তু কর্তব্য কোথায়? যেন গত ৭৫ বছর ধরে পুরো দেশ কেবল অধিকার বণ্টন করছে, কোনও কর্তব্য করেনি।' বিচারপতি অধ্যাপকের মন্তব্যকে 'কুৎসিত' বলে উল্লেখ করেন বলেন, 'এমন ভাষা ব্যবহার করা যায় না যা অন্যদের অনুভূতিতে আঘাত করে। নিরপেক্ষ ভাষা ব্যবহার করুন।'
একইসঙ্গে শীর্ষ আদালত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সিট গঠন করে এই বিষয়ে তদন্ত শুরু করতে বলেছে। ৩ জন আইপিএস অফিসার থাকবেন সেই টিমে, একজন মহিলা আধিকারিকও থাকবেন। সিটের সদস্যরা হরিয়ানা বা দিল্লির হতে পারবেন না বলেও জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। মাহমুদাবাদকে ১৮ মে দিল্লি থেকে গ্রেফতার করা হয় এবং মঙ্গলবার হরিয়ানার একটি আদালত তাঁকে ১৪ দিনের বিচারবিভাগীয় হেফাজতে পাঠায়। মূলত সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ভঙ্গের চেষ্টা, বৈরিতা তৈরির চেষ্টা, বিচ্ছিন্নতাবাদে উস্কানি, সশস্ত্র বিদ্রোহ, নাশকতামূলক কার্যকলাপ, ধর্মীয় বিশ্বাসের অবমাননার অভিযোগ দায়ের হয়েছে অধ্যাপকের বিরুদ্ধে।
সম্প্রতি ফেসবুকে অধ্যাপক মাহমুদাবাদ অপারেশন সিঁদুর নিয়ে উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিং এবং কর্নেল সোফিয়া কুরেশির প্রেস কনফারেন্সকে 'হিপোক্রেসি' বলে উল্লেখ করেছিলেন। এমনকী এই পোস্টে তিনি লেখেন, 'আমি খুব খুশি যে অনেক দক্ষিণপন্থী ভাষ্যকার কর্নেল সোফিয়া কুরেশির প্রশংসায় পঞ্চমুখ। কিন্তু তারা সম্ভবত একইভাবে জোর গলায় তারা এটা দাবি করতে পারছেন না যে সমস্ত ভারতীয় নাগরিক বিজেপির ঘৃণা বিদ্বেষ ছড়ানোর কারণে, অনৈতিক বুলডোজার চালিয়ে ঘর নষ্ট করে দেওয়ার কারণে, গণপিটুনির শিকার হয়ে নিগৃহীত হয়েছেন তারা কী আগামীতে সুরক্ষিত থাকবে দেশে?'
এরপরেই ওই অধ্যাপককে হরিয়ানা রাজ্য মহিলা কমিশনের তরফে একটি নোটিশ পাঠানো হয়। সমনের জবাবে অধ্যাপক মাহমুদাবাদ বলেন, অপারেশন সিঁদুর এবং এর সঙ্গে জড়িত মহিলা অফিসারদের উপর তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট মোটেও নারীবিদ্বেষী ছিল না, অযথা তাঁকে সেন্সর করা হচ্ছে।