প্রযুক্তি উন্নয়নে আবারও একপ্রস্থ চাকরি যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে! যার নেপথ্যে রয়েছে রাজ্যব্যাপী গৃহস্থের বাড়িতে পুরনো মিটারগুলির বদলে স্মার্ট মিটার লাগানোর ভাবনা। বলা হচ্ছে, এই মিটারের অনেক সুবিধা নাকি রয়েছে। অথচ, এই মিটার বসানো হলেই অন্তত কয়েক হাজার মানুষের চাকরি যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। রুজি হারানোর ভয়ে তাই আন্দোলনে নামার কথা ভাবছেন ভবিষ্যতের সম্ভাব্য চাকরিহারারা!
তথ্য বলছে, রাজ্যে স্মার্ট মিটার চালুর ভাবনা এবার বাস্তবায়িত করতে চায় সরকার। সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে বিদ্যুৎ দফতরের কর্মী বা সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ সরবরাহ সংস্থা কিংবা ঠিকাদার সংস্থার কর্মীদের আর বাড়ি বাড়ি গিয়ে গ্রাহকদের মিটারের রিডিং নিতে হবে না। সেই কাজ সারা যাবে সংস্থার অফিসে বসেই।
এর ফলে এখন যে কর্মীরা শুধুমাত্র গ্রাহকদের বাড়ি বাড়ি ঘুরে মিটারের রিডিং নেন, তাঁদের আর কোনও কাজ থাকবে। তাঁদের জন্য বিকল্প কাজের ব্যবস্থা করা হবে, এমন কোনও আশ্বাসও পাওয়া যায়নি বলে দাবি করা হচ্ছে। ফলত, কাজ হারানোর শঙ্কা বাড়ছে।
প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে, শুধুমাত্র কলকাতা শহরেই এমন প্রায় হাজার খানেক কর্মীর রুজিরুটি অনিশ্চয়তার মধ্যে চলে গিয়েছে। ওই কর্মীরা একটি ঠিকাদার সংস্থার মাধ্যমে নিয়োগ পেয়েছিলেন। তাঁরাই বাড়ি বাড়ি ঘুরে মিটারের রিডিং নিতেন।
বিদ্যুৎ দফতরের সঙ্গে কাজ করেন, এমন এক ঠিকাদার সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, স্মার্ট মিটার বসানোর কাজ সম্পূর্ণ হলে তাঁদের সংস্থার প্রায় দেড় হাজার কর্মী চাকরি হারাবেন। তাই, তাঁদের চাকরি বাঁচাতে তাঁরা আন্দোলনের পথে হাঁটার কথা ভাবছেন বলে জানিয়েছেন।
বিষয়টি নিয়ে বিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারাও সুর চড়াতে শুরু করেছেন। তাঁদের বক্তব্য হল, কর্তৃপক্ষ বা প্রশাসন কোনও গ্রাহককে স্মার্ট মিটার নেওয়ার জন্য জোর করতে পারে না। কিন্তু, রাজ্যের সরকার সেই পথেই হাঁটছে বলে অভিযোগ। যদিও এত আপত্তির মধ্য়েও শহরাঞ্চল ও তার আশপাশের এলাকায় স্মার্ট মিটার বসানোর কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে।
বিদ্যুৎ দফতরের কর্তারা বলছেন, স্মার্ট মিটার একটি অত্যাধুনিক মিটার। যার সঙ্গে সরাসরি ইন্টারনেটের যোগ থাকবে। এই মিটার লাগানো হলে গ্রাহকরা উপকৃতই হবেন। তাঁরা সেটা উপলব্ধি করলে নিজে থেকেই এই মিটার লাগাতে চাইবেন।
বস্তুত, মোবাইল ফোনের মতোই স্মার্ট মিটারেও একটি সিম কার্ড থাকে। কত ইউনিট বিদ্যুৎ খরচ করা হল, তার দাম কত, ভোল্টেজ কত রয়েছে, এই সমস্ত কিছুর হিসাব রাখে স্মার্ট মিটার। মিটার রিডিং করতে কারও বাড়িতে যেতে হয় না। সেটা বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার অফিস থেকেই সেরে ফেলা যায়। এমনকী, অফিস থেকেই এই মিটার চালু বা বন্ধ করা যায়।
এটি চলে মূলত প্রিপেড সিস্টেমে। অর্থাৎ গ্রাহক আগে থেকে টাকা ভরবেন এবং সেই অনুসারে বিদ্যুৎ পাবেন। টাকা না ভরা হলে অফিস থেকে মিটার বন্ধ করে দেওয়া হবে। তবে, আগাম টাকা না ভরা থাকলেও সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা পর্যন্ত বিদ্যুৎ ব্যবহার করা যাবে।