সন্তান প্রসবের তিন দিনের মাথায় স্ত্রীকে খুনে শিলিগুড়ির এক ব্যক্তির কারাদণ্ডের সাজা বহাল রাখল কলকাতা হাইকোর্ট। আদালতের পর্যবেক্ষণ, আসামি শুধু তাঁর স্ত্রীকে খুন করেননি, বরং এক শিশুকে তার মায়ের যত্ন পাওয়া থেকে সারা জীবনের জন্য বঞ্চিত করেছেন। এই বলে শুক্রবার ওই ব্যক্তির সাজা বহাল রাখে হাইকোর্ট।
আরও পড়ুন: আইনজীবীকেই জেলে পাঠালেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি, বিরাট অভিযোগ উঠল
জানা গিয়েছে, ওই ব্যক্তির নাম কৃষ্ণ তিওয়ারি। তিনি শিলিগুড়ির বাসিন্দা। স্ত্রীকে খুন, বধূ নির্যাতন এবং প্রমাণ লোপাটের অভিযোগে প্রথমে নিম্ন আদালত তাঁকে দিয়েছিল। সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন কৃষ্ণ। বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজ এবং বিচারপতি অপূর্ব সিনহা রায়ের ডিভিশন বেঞ্চে তিনি দাবি করেন, স্ত্রী কুসুমকে তিনি হত্যা করেননি। এছাড়াও মামলায় বিভিন্ন ত্রুটি তুলে ধরেন কৃষ্ণের আইনজীবী। তাঁর যুক্তি, এফআইআর নথিভুক্ত এবং ঘটনার সময়ের মধ্যে পার্থক্য ছিল। আইও ঘটনার তদন্ত সঠিকভাবে করেননি। এছাড়াও, এই মামলায় কোনও প্রত্যক্ষদর্শী নেই। তিনিই যে কুসুমকে হত্যা করেছিলেন তার কোনও প্রত্যক্ষদর্শী ছিল না।
তবে আদালত সমস্ত কিছু তথ্য প্রমাণ খতিয়ে দেখে জানতে পারে, মৃতদেহ যে ঘরে পাওয়া গিয়েছিল সেখানে উপস্থিত ছিলেন কৃষ্ণ। তাঁর আইনজীবী দাবি করেন, প্রসবজনিত কারণে শারীরিক দুর্বলতা এবং পড়ে যাওয়ার ফলে কুসুমের মৃত্যু হয়েছিল। তবে সেই যুক্তি গ্রহণযোগ্য হয়নি আদালতের কাছে। আদালত জানায়, মৃতার শরীরে যে আঘাত ছিল সেগুলি পড়ে যাওয়ার ফলে হওয়া সম্ভব নয়। তাছাড়া, রাজ্য সরকারের তরফে পেশ করা একজন সাক্ষী জানিয়েছেন, কৃষ্ণ তাঁর স্ত্রীর মৃতদেহ নদীর ধারে দাহ করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু, স্থানীয়রা তাঁকে বাধা দেন ।
ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০০ ধারা উল্লেখ করে আদালত জানায়, যদি কোনও ব্যক্ত শারীরিক অসুস্থতার কারণে দুর্বল থাকেন এবং তাঁর ওপর সেই সময় হামলা চালালে মৃত্যু হতে পারে, এমনটা জানার পরেও যদি হামলা চালানো হয় তাহলে এই ধরনের অপরাধকে হত্যার অপরাধ হিসেবে বিবেচিত করা যেতে পারে। উল্লেখ্য, ঘটনার সময় কুসুম সন্তান প্রসবের কারণে শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছিলেন। যারফলে তিনি দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন। মামলায় কৃষ্ণের সাজা বহাল রাখে হাইকোর্ট। প্রসঙ্গত, আসামির কোনও অপরাধমূলক ইতিহাস নেই। ইতিমধ্যেই তিনি ১৩ বছর কারাদণ্ড ভোগ করেছেন। আদালতের পর্যবেক্ষণ, ১৪ বছর কারাদণ্ড পূর্ণ হওয়ার পর আসামিকে ক্ষমা প্রার্থনা করার সুযোগ দেওয়া উচিত।