সাত বছর আগে রানাঘাটে একাকী বৃদ্ধাকে গণধর্ষণ করে নির্মমভাবে খুন করা হয়েছিল। সেই ঘটনায় আগেই দুই অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করেছিল আদালত। শনিবার তাদের সাজা ঘোষণা করা হয়েছে। দুজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় খুন এবং ৩৭৬ডি ধারায় গণধর্ষণের অভিযোগে এই দুইজনকে দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দেন রানাঘাট আদালতের অতিরিক্ত জেলা জজ সৌমেন গুপ্ত।
আরও পড়ুন: বাড়িতে ঢুকে গৃহবধূকে ধর্ষণের অভিযোগ, প্রতিবেশী যুবকের ঘটনায় কীর্ণাহারে আলোড়ন
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পাশাপাশি দুজনের ২৫ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। অনাদায়ে অতিরিক্ত ৬ মাসের কারাবাসের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সরকারি আইনজীবী মিলন কুমার সরকার, জানান এই ঘটনায় একাধিক সাক্ষীর সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। অপরাধীদের বিরুদ্ধে খুন এবং গণধর্ষণের মামলা রুজু হয়েছিল।
মামলার বয়ান অনুযায়ী, ঘটনাটি ঘটেছিল ২০১৮ সালের ১৮ মে। ৬৫ বছরের ওই বৃদ্ধা একমাত্র মেয়ে বিবাহিতা। ফলে রানাঘাট স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় তিনি বাড়িতে একাই থাকতেন। যদিও মেয়ের শ্বশুরবাড়ি তাঁর বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে অবস্থিত। তবে একা থাকার সুযোগ নিয়ে এই অপরাধ করে দুজন। জানা যায়, রাতে বৃদ্ধা দরজা খুলতেই শুভঙ্কর শিকদার এবং তনু সরকার নামে দুজন ঘরের ভিতর ঢুকে পড়ে। এরপরেই তাঁকে গণধর্ষণ করে নৃশংসভাবে হত্যা করে।
পরের দিন সকালে বৃদ্ধার মেয়ে বাড়িতে গিয়ে দেখেন অর্ধনগ্ন অবস্থায় তাঁর মায়ের ক্ষতবিক্ষত দেহ পড়ে রয়েছে মেঝেতে। তড়িঘড়ি তিনি মাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। সেই ঘটনায় বৃদ্ধার মেয়ে প্রথমে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন। পরে ময়নাতদন্তে রিপোর্টে জানা যায়, বৃদ্ধাকে খুনের আগে গণধর্ষণ করা হয়েছিল। এরপরে তদন্ত নেমে পড়ে পুলিশ। পরে পুলিশ ঘটনায় শুভঙ্কর এবং তনুকে শনাক্ত করে। তবে ততক্ষণে তারা পালিয়ে গিয়েছিল ভিন রাজ্যে। পরে পুলিশ তাদের মুম্বই থেকে গ্রেফতার করে। তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, এই দুজনের মুম্বই থেকে নেপালে পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল। তবে তার আগে পুলিশ মুম্বইয়ে হানা দিয়ে তাদের ধরে ফেলে।
আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনার রাতে বৃদ্ধা শৌচালয়ে যাওয়ার জন্য ঘরের দরজা খুলেছিলেন। সেই সুযোগে দুজন তাঁর ঘরে ঢুকে পড়েছিল। সরকারি আইনজীবী জানান, শুক্রবার দুজনকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। শনিবার তাদের দুজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন বিচারক। এ বিষয়ে পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, তারা অপরাধের বিরুদ্ধে বরাবর সক্রিয়। জানুয়ারি মাসেই তিনটি মামলার রায় হয়েছে। পুলিশ নিয়মিত মামলার ওপর নজর রাখে। এই রায়কে রানাঘাট পুলিশের সাফল্য বলে জানিয়েছেন এসডিপিও সবিতা গটিয়াল। অন্যদিকে, দুই অপরাধীর আইনজীবী জানান, রায়ের প্রতিলিপি হাতে পেলে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হবেন।