ওয়াকফ সংশোধনী বিল নিয়ে কলকাতা, হায়দরাবাদ সহ বহু জায়গায় প্রতিবাদ হয়েছিল শুক্রবার। কংগ্রেস, তৃণমূল, সমাজবাদী পার্টি সহ একাধিক রাজনৈতিক দল ওয়াকফ সংশোধনী বিলের বিরোধিতায় সরব হয়েছে। এছাড়া ওয়াকফ সংশোধনী বিল নিয়ে বিরোধী এবং অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডকে বিরোধিতা করতে দেখা গিয়েছে। এরই মাঝে শাহিনবাগের মতো আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছে। তবে এই সবের মাঝেই ওয়াকফ সংশোধনী বিলের সমর্থনে গলা ফাটালেন উত্তরাখণ্ডের ওয়াকফ বোর্ডের সভাপতি। তাঁর কথায়, গরিম মুসলিমরা সরকারের বিলের বিরোধিতা করছে না, রাজনৈতিক মুসলিমরা বিরোধিতা করছেন। (আরও পড়ুন: সীমান্তে বাড়ছে সহিংসতা, ফের এক অনুপ্রবেশকারীকে খতম করল BSF)
আরও পড়ুন: 'ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক…', মোদী-ইউনুস বৈঠকের পর বড় মন্তব্য হাসিনা বিরোধী নেতার
ওয়াকফ সংশোধনী বিল প্রসঙ্গে উত্তরাখণ্ড ওয়াকফ বোর্ডের চেয়ারম্যান শাদাব শামস বলেছেন, 'ওয়াকফ সংশোধনী বিলটি গরিবদের জন্য এবং আমি বলেছিলাম যে গরিব মুসলমানরা প্রতিবাদ করছে না, যারা প্রতিবাদ করছে তারা রাজনৈতিক মুসলমান... কুশপুত্তলিকা পোড়ানো ইসলামের অংশ নয়, তাহলে তারা কীভাবে কুশপুত্তলিকা পোড়াচ্ছে? এরা রাজনৈতিক মুসলমান, তারা সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। এটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যে জনগণের জন্য লড়াই করবে ভারতীয় জনতা পার্টি... দরিদ্ররা তাদের অধিকার পাবেন এবং পসমান্দাদের কাউকে ভয় পাওয়ার দরকার নেই।' (আরও পড়ুন: 'ইউনুসের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে তৎপর ভারতীয় RAW এজেন্টরা...')
আরও পড়ুন: ভারতে ওয়াকফ সংশোধনী পাশ হতে বাংলাদেশ থেকে 'কান্নার সুর' ভাসাল জামাতের ছাত্রশিবির
এর আগে দারা শিকোহ ফাউন্ডেশনের সভাপতি মহম্মদ আমির রশিদ দাবি করেছিলেন, ওয়াকফ সংশোধনী বিল পাশ হওয়ায় মুসলিমরা খুবই খুশি। তিনি দাবি করেন, তাঁরা এই খুশিতে পটকা ফাটিয়েছেন। উল্লেখ্য, এর আগে লোকসভায় এই বিল উপস্থাপনের দিনও দিল্লি এবং ভোপালে বহু মুসলিম মহিলাদের মোদী বন্দনা করতে দেখা গিয়েছিল। রশিদ বলেন, 'ওয়াকফ (সংশোধনী) বিল, ২০২৫ রাজ্যসভায় পাস হয়েছে এবং দরিদ্র এবং পসমন্দা মুসলমানরা এতে খুব খুশি... ওয়াকফ (সংশোধনী) বিল একটি নতুন আশার আলো নিয়ে এসেছে... আমরা পটকা ফাটিয়েছি, মোমবাতি জ্বালিয়েছি এবং বিল বিতরণ করেছি... ২০২৫ মুসলমানদের জন্য উন্নয়নের নতুন দ্বার উন্মোচন করবে।'
প্রসঙ্গত, লোকসভার এবং রাজ্যসভাতে পাশ হয়েছে ওয়াকফ (সংশোধনী) বিল। রাজ্যসভায় এই বিলটি পাশ করাতে বিজেপির প্রয়োজন ছিল ১১৯টি ভোটের। তারা সেই সংখ্যা থেকে বেশ কিছুটা বেশি ভোটই পায়। ৩৩ ভোটের ব্যবধানে বিলটি পাশ হয় সংসদের উচ্চকক্ষে। এর পক্ষে পড়েছিল ১২৮টি ভোট, বিপক্ষে পড়ে ৯৫টি ভোট। এর আগে লোকসভায় এই বিলের পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন ২৮৮ জন সাংসদ, বিপক্ষে ভোট দিয়েছিলেন ২৩২ জন সাংসদ। (আরও পড়ুন: 'বাবু...', নিহত বায়ুসেনা পাইলটের দেহ জড়িয়ে কান্না বাগদত্তার, দেখুন সেই ভিডিয়ো)
উল্লেখ্য, ওয়াকফের অধীনে ভারতে মোট ৮.৭ লক্ষ সম্পত্তি আছে। ৯.৪ লক্ষ একর জমি নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করে ওয়াকফ। যার আনুমানিক মূল্য ১.২ লক্ষ কোটি টাকা। দেশে সবচেয়ে বেশি ওয়াকফ সম্পত্তি আছে উত্তরপ্রদেশে (২,৩২,৫৪৭, দেশের মোট ওয়াকফ সম্পত্তির ২৭ শতাংশ)। তারপরই তালিকায় আছে পশ্চিমবঙ্গ। রিপোর্ট অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গে মোট ৮০ হাজার ৫৪৮টি ওয়াকফ সম্পত্তি রয়েছে। বাংলায় ওয়াকফ সম্পত্তির ওপরে রয়েছে ১৫৮টি স্কুল, ৪টি মডেল ইংলিশ মিডিয়াম মাদ্রাসা, ১৯টি মুসলিম হস্টেল, ৯টি হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্র। বীরভূমে ওয়াকফের জমির ওপরে রয়েছে একটি শপিং কমপ্লেক্সও। তবে এত সম্পত্তি থাকা সত্ত্বেও ভারতে ওয়াকফের বার্ষিক আয় নাকি মাত্র ১৬৩ কোটি টাকা। এই আবহে বিজেপি ওয়াকফ সম্পত্তি পরিচালনায় গাফিলতির অভিযোগ তুলেছে। এই আবহে ওয়াকফ পরিচালনায় স্বচ্ছতা আনতেই নাকি এই সংশোধনী বিল আনা হয়েছিল।