দোনেৎস্ক অঞ্চলে দু'জন চিনাকে আটক করা হয়েছে বলে দাবি করেছে ইউক্রেনের। কিয়েভের দাবি, রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধ করছিল দুই চিনা। গত সপ্তাহেই সেই বিষয়টি জানিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। ওই দুই চিনা নাগরিককে প্রকাশ্যে এনেছে ইউক্রেন। প্রকাশ করা হয়েছে তাঁদের পরিচয়ও। আর তারপরই প্রশ্ন উঠেছে যে ইউক্রেন যে কাজটা করেছে, সেটা কি রাজনৈতিক চাল ছিল? কারণ আমেরিকা এবং চিনের মধ্যে যখন শুল্ক যুদ্ধ চরমে উঠেছে, তখন বেজিংয়ের সঙ্গে বাণিজ্যিক সমন্বয় বাড়ানোর চেষ্টা করছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন। আর সেই পরিস্থিতিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে চিনের ভূমিকা নিয়ে কিয়েভ একটা ভাবমূর্তি তৈরি করতে যাচ্ছে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।
সম্প্রতি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি অভিযোগ করেন, ১৫৫ জন চিনা নাগরিক রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধ করছে বলে কিয়েভের কাছে তথ্য আছে। জেলেনস্কি বলেন, ‘চিনা বিষয়টি গুরুতর। ১৫৫ জনের নাম, পাসপোর্ট ও অন্যান্য তথ্য আমাদের হাতে এসেছে যারা ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। আমাদের বিশ্বাস, এ সংখ্যা আরও বেশি।’ তিনি আরও দাবি করেন, বেজিং এই বিষয়ে অবগত ছিল। কিন্তু তখন বেজিং ইউক্রেনের সব অভিযোগ অস্বীকার করে।
চিনের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র লিন জিয়ান বলেন, ‘এসব অভিযোগের কোনও ভিত্তি নেই। চিন সবসময় তার নাগরিকদের সংঘাতপূর্ণ এলাকা থেকে দূরে থাকার নির্দেশ দিয়ে আসছে।’ এই আবহে ধৃত দুই চিনাকে প্রকাশ্যে আনল ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির প্রশাসন। একইসঙ্গে তারা অভিযোগ করেছে, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন লঙ্ঘন করছে চিন।
সংবাদমাধ্যম সিএনএনের প্রতিবেদন অনুসারে, ধৃত দুই চিনা নাগরিককে সেনা পোশাক পরেই প্রেস ব্রিফিং রুমে আনা হয়। তাঁদের সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার অনুমতিও দেওয়া হয়। তাঁদের পাশে একজন অনুবাদক দাঁড়িয়েছিলেন, যিনি বন্দীদের প্রশ্নগুলিকে অনুবাদ করছিলেন। আর সশস্ত্র ইউক্রেনীয় নিরাপত্তা বাহিনী পাহারা দিচ্ছিল।
এক চিনা জানিয়েছেন, কোভিড মহামারীর সময় চাকরি হারানোর পর তিনি টাকা রোজগারের উপায় খুঁজছিলেন। রাশিয়ায় প্রতি মাসে আড়াই লক্ষ রুবেল (প্রায় ৩,০০০ ডলার) আয়ের সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। তিনি আরও বলেন, অতীতে তাঁর চিকিৎসা পুনর্বাসনের প্রশিক্ষণ ছিল, যা তিনি রাশিয়ান সামরিক বাহিনীতে করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু যখন তিনি মস্কোতে পৌঁছন, তখন তাঁকে জোর করে যুদ্ধ প্রশিক্ষণে যোগ দিতে বলা হয় এবং তাকে যুদ্ধের নিযুক্ত করা হয়।
উভয় যুদ্ধবন্দীই বলেছেন, তাঁদের ভাষাগত সমস্যা ছিল এবং তাঁদের দেওয়া সমস্ত নথিপত্র রুশ ভাষায় থাকায়, তাঁরা কেউই কিছু বুঝতে পারেনি। একজন চিনা জানিয়েছেন, হাতের ইশারায় অন্য সহকর্মীদের সঙ্গে মত বিনিময় করতেন।
প্রসঙ্গত, চিনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার হয়ে লড়তে সেনা পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে বেশ কিছুদিন ধরেই। তবে জেলেনস্কির দাবি, রাশিয়া শুধু চিন নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে লোকজন নিয়ে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। এদিকে চিনের বক্তব্য, তারা ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রেখেছে এবং কোনও পক্ষকে অস্ত্র বা সামরিক সহায়তা দিচ্ছে না।