বাংলাদেশের সাম্প্রতিক বাণিজ্য নীতি ও বিবৃতির কারণে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভারত। তবে তা সত্ত্বেও ভারত সরকার ইঙ্গিত দিয়েছে যে তারা দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের আরও অবনতি রোধে তাৎক্ষণিক ভাবে প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ এড়ানোর চেষ্টা করবে। সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকার বাণিজ্য সংকেত ইতিবাচক না হলেও বাংলাদেশের সঙ্গে কোনও বাণিজ্য যুদ্ধে জড়াতে চায় না ভারত। সম্প্রতি স্থল সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে সুতো আমদানি নিষিদ্ধ করেছে বাংলাদেশ। প্রসঙ্গত, এর আগে ২০২০ সালে বাংলাদেশকে দেওয়া ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা প্রত্যাহার করে নেয় ভারত। তবে ভারত সরকারের সূত্রগুলো বলছে, ভারতের বন্দর ও বিমানবন্দরগুলোর যানজট নিরসনের লক্ষ্যেই বাংলাদেশকে দেওয়া ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধার অবসান ঘটানো হয়েছিল। এরপর বাংলাদেশের তরফ থেকে বড় বড় দাবি করা হলেও সম্প্রতি সেই দেশের বাণিজ্য উপদেষ্টা মেনে নেন, ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলের ফলে তাদের ২০০০ কোটি টাকা বেশি খরচ হয়েছে পণ্য রফতানিতে। (আরও পড়ুন: চোখ খুলে ঘুমিয়ে পড়া বাংলাদেশের স্বপ্ন ভাঙবে এবার? বড় পরিকল্পনা ভারতের)
আরও পড়ুন: টাইমের ১০০ প্রভাশালীর তালিকায় ইউনুস, নেই কোনও ভারতীয়, তবে আছে ভারত যোগ
এদিকে ভারতের দাবি, ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বন্ধ হওয়ার আগেই বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এমন কিছু পদক্ষেপ নিচ্ছিল, যা দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। গত মার্চে ভারতের সঙ্গে তিনটি স্থলসীমান্ত বন্ধ ও সুতো আমদানি নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ। এর আগে জানুয়ারিতে বাংলাদেশ বেনাপোল কাস্টমস হাউসের ওপর নজরদারি 'কঠোর' করার ঘোষণা করেছিল। এদিকে বাংলাদেশের বস্ত্র প্রস্তুতকারকরা ইতোমধ্যে সরকারকে সতর্ক করে বলেছে, ভারত থেকে সুতো আমদানি নিষিদ্ধ করা হলে তা রফতানি শিল্পের জন্য আত্মঘাতী হবে। (আরও পড়ুন: প্রকাশ্যে 'হিন্দু বিরোধী' ভাষণ পড়শি দেশের সেনা কর্তার, খসে পড়ল মুখোশ)
অপরদিকে বাংলাদেশ যখন ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক নষ্ট করে চলেছে, তখনই তারা পাকিস্তানের সঙ্গে সরাসরি বাণিজ্যও শুরু করেছে। গত ফেব্রুয়ারিতে ট্রেডিং করপোরেশন অফ পাকিস্তানের (টিসিপি) মাধ্যমে পাকিস্তান থেকে ৫০ হাজার টন চাল কেনার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ। এই ঘটনাগুলি ভারতীয় কর্মকর্তাদের উদ্বেগকে আরও গভীর করেছে কারণ বাংলাদেশে চরমপন্থার ক্রমবর্ধমান লক্ষণ এবং পাকিস্তানের সাথে ক্রমবর্ধমান ঘনিষ্ঠতা আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য উদ্বেগজনক বলে মনে করা হচ্ছে। ভারত পাকিস্তানকে বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদের কেন্দ্রস্থল বলে মনে করে। সূত্র জানায়, পাকিস্তান এখন বাংলাদেশে রফতানি বাড়ানোর সুযোগ খুঁজছে। বেশ কয়েক বছর পর দুই দেশের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের আলোচনা আবার শুরু হয়েছে। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আমনা বালোচ এখন ঢাকায় এবং বিদেশমন্ত্রী ইসহাক দার আগামী সপ্তাহে বাংলাদেশ সফর করবেন।
এই আবহে ভারত স্পষ্ট করে দিয়েছে যে তারা বাণিজ্যকে রাজনীতির সঙ্গে জড়াতে চায় না। তারা স্থিতিশীলতা ও সহযোগিতার পক্ষে। তবে বাংলাদেশের নীতি এবং পাকিস্তানের সাথে তাদের ক্রমবর্ধমান সম্পর্কের বিষয়ে সতর্ক দিল্লি। আগামীতে ঢাকার নীতি কোন দিকে মোড় নেয় সেটাই দেখার। এই আবহে বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র বলেন, 'ভারত আঞ্চলিক সহযোগিতা ও যোগাযোগ বাড়াতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, তবে এই সুবিধাগুলি জাতীয় সুরক্ষা এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধার ভিত্তিতে দেওয়া হয়।' বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের এই বক্তব্য বাংলাদেশের জন্য একটি বড় বার্তা যে, ঢাকার একতরফা শত্রুতামূলক পদক্ষেপ সহ্য করবে না দিল্লি।