কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের 'আম্বেদকর-ফ্য়াশন' মন্তব্যের বিরোধিতায় বেনজির আক্রমণের পথে হাঁটল জাতীয় কংগ্রেস। দলের তরফে সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গের সাফ কথা, এহেন মন্তব্য যিনি করতে পারেন, তাঁর কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় থাকার কোনও অধিকার নেই!
বুধবার এই ইস্যুতে সাংবাদিক সম্মেলন করেন খাড়গে। মোদীকে সরাসরি বলেন, 'আপনার মনে যদি বাবাসাহেবের প্রতি ন্যূনতম কোনও স্থান থেকে থাকে, শ্রদ্ধা থেকে থাকে, তাহলে মধ্যরাতের মধ্যেই অমিত শাহকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা থেকে আপনি বরখাস্ত করবেন।...'
প্রবীণ কংগ্রেস নেতার আরও বক্তব্য, যদি বাবাসাহেবকে নিয়ে এমন অবমাননাকর মন্তব্য করার পরও নরেন্দ্র মোদী অমিত শাহকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা থেকে না সরান, তাহলে বুঝতে হবে, মোদী শুধু মুখেই বাবাসাহেবের কথা বলেন। আসলে সংবিধান প্রণেতার প্রতি ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর মনে কোনও সম্মান নেই!
একইসঙ্গে, অমিত শাহকেও সরাসরি নিশানা করেছেন মল্লিকার্জুন খাড়গে। তিনি সোজাসুজি বলেন, 'অমিত শাহ যে মন্তব্য করেছেন, তার জন্য তাঁকে ক্ষমা চাইতেই হবে। এটাই আমাদের দাবি।'
তিনি আরও বলেন, ‘যে ব্যক্তি সংবিধান পড়ে শপথ নিলেন, সংবিধান পড়ে ভিতরে (সংসদে) এলেন, মন্ত্রী হলেন, সদস্য হলেন, তিনিই যদি সংবিধানের অপমান করেন, তাহলে তাঁর মন্ত্রিসভায় থাকার কোনও অধিকার নেই।’
খাড়গে কেন্দ্রের সরকারকে মনে করিয়ে দেন, বাবাসাহেব চিরকাল সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষের কথা বলেছেন। তিনি আদিবাসী, দলিত, জনজাতি, মহিলাদের নিরাপত্তা ও ক্ষমতায়নের কথা বলেছেন। তাই তিনি শুধুমাত্র শিক্ষিত সমাজের আদর্শ নন। তিনি নিরক্ষর মানুষেরও অনুপ্রেরণা।
খাড়গে রীতিমতো হুঁশিয়ারির সুরে বলেন, মোদী যদি শাহের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ করেন, একমাত্র তবেই দেশবাসী শান্ত হবে। তা না হলে মানুষ বাবাসাহেবের নাম নিয়ে সোচ্চার হবে। এমনকী, বাবাসাহেবের নামে আমজনতা প্রাণ বিসর্জন করতেও প্রস্তুত বলে সরকার পক্ষকে কার্যত সতর্ক করেন খাড়গে।
প্রসঙ্গত, চব্বিশের নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দলের স্বীকৃতি ফিরে পাওয়ার পর কংগ্রেস নানা ইস্যুতে তৃতীয় মোদী সরকারের বিরুদ্ধে সরব হলেও কখনও তাদের এতটা আক্রমণাত্মক ভূমিকায় দেখা যায়নি। যেখানে সরাসরি অমিত শাহকে পদত্যাগ করতে কার্যত 'আল্টিমেটাম' দেওয়া হচ্ছে!
লক্ষ্যণীয় বিষয় হল, ইতিমধ্য়েই তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ ডেরেক ও'ব্রায়েন অমিত শাহের বিরুদ্ধে 'প্রিভিলেজ নোটিশ' পেশ করেছেন। প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া কংগ্রেসের আল্টিমেটাম তারও এক কাঠি উপরে!
উল্লেখ্য, কংগ্রেস এবং তৃণমূল কংগ্রেস - দুই দলই বিরোধী INDI জোটের সদস্য। চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনের পর যেখানে কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধীকে লোকসভার বিরোধী দলনেতার জায়গা করে দিতে INDI জোটের পূর্ণ সমর্থন ছিল। সেখানে দিন কয়েক ধরে সেই রাহুলকেই পিছনে ফেলে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়কে প্রধান মুখ হিসাবে তুলে ধরার দাবি তোলা হচ্ছে।
এই প্রেক্ষাপটে অমিত শাহ বেঁফাস মন্তব্য করে ফেলায় দুই শরিক দলই ঝাঁপিয়ে পড়েছে অমিত শাহ তথা মোদী সরকারকে কোমর বেঁধে আক্রমণ করতে।