ইদ-উল-ফিতরের ঠিক আগেই মসজিদে বিস্ফোরণ! ঘটনাস্থল মহারাষ্ট্রের বীড জেলা। দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস অনুসারে, রবিবার (৩০ মার্চ, ২০২৫) ভোররাত ২টো ৩০ মিনিট নাগাদ এই ঘটনা ঘটে। টাইমস অফ ইন্ডিয়া অনুসারে - এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ইতিমধ্য়েই দুই যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মিন্ট অনুসারে - ধৃত দুই যুবকের বয়স যথাক্রমে - ২২ ও ২৪ বছর। তারা দু'জনই বীডের গেওরাই তালুকের বাসিন্দা।
প্রাথমিক তদন্তে যেটুকু তথ্য উঠে এসেছে, সেই অনুসারে - জিলেটিন স্টিক ব্যবহার করে এই বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছিল। পুলিশের পক্ষ থেকেই একথা জানানো হয়েছে। তবে, এখনও পর্যন্ত অন্তত রবিবার ভোরের এই হামলায় কোনও মৃত্যুর বা কারও আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি।
পুলিশের তদন্তে এও মনে করা হচ্ছে, রীতিমতো ছক কষেই এই অপকর্ম করা হয়েছে। জানা গিয়েছে, এক যুবক প্রথমে মসজিদের ভিতরে ঢোকে। এবং খুব সম্ভবত সেই যুবকই মসজিদের ভিতর জিলেটিন স্টিক রেখে যায়। পরে সেই জিলেটিন স্টিকে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।
বিষয়টি স্থানীয় গ্রাম প্রধানের নজরে আসতেই সঙ্গে সঙ্গে পদক্ষেপ করেন তিনি। ভোর ৪টে নাগাদ তিনিই স্থানীয় তালাওয়াড়া থানায় এই ঘটনার খবর পাঠান ও অভিযোগ জানান। পুলিশও এরপর ব্যবস্থা নিতে দেরি করেনি। বীডের পুলিশ সুপার নভনীত কানওয়াত নিজে ঘটনাস্থলে যান। তাঁর সঙ্গে পুলিশের অন্য আধিকারিক ও কর্মীরাও সেখানে পৌঁছন।
এই ঘটনা ঘিরে যাতে কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয়, তা নিশ্চিত করতে ওই এলাকায় প্রচুর পরিমাণে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। কঠোর করা হয় নিরাপত্তাব্যবস্থা।
অন্য়দিকে, বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে - এই বিস্ফোরণের ফলে ওই মসজিদের ভিতরের মেঝের বেশ কিছুটা অংশ ফেটে গিয়েছে। ফাটল ধরেছে মসজিদের মূলে কাঠামোতেও।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে যে দু'জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদেরই একজন নিজের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে একটি ভিডিয়ো আপলোড করে। সেই ভিডিয়োয় এই ঘটনার দৃশ্য়াবলী ছিল। সোশাল মিডিয়ায় সেই ভিডিয়ো আপলোড হওয়ার বিষয়টি পুলিশের নজরে আসতেই দুই অভিযুক্তকে পাকড়াও করে পুলিশ।
এই ঘটনায় যে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে, সেই অনুসারে - শনিবার (২৯ মার্চ, ২০২৫) সন্ধ্য়ায় বীডের অর্ধমসলা এলাকায় একটি পদযাত্রার আয়োজন করা হয়েছিল। সেই কর্মসূচিতে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ যোগ দেয়।
ওই দিনই রাত ৯টা ৩০ মিনিট নাগাদ সেখানে দুই যুবক এসে পৌঁছয়। তাদের মুখে বেশ কিছু সাম্প্রদায়িক মন্তব্য শোনা যায় বলে সংশ্লিষ্ট এফআইআর-এ উল্লেখ করা হয়েছে। ওই দু'জন ওই এলাকায় মসজিদ নির্মাণ নিয়েও প্রশ্ন তোলে। এর ফলে সাময়িক উত্তেজনা ছড়ালেও তখনকার মতো পরিস্থিতি শান্ত হয়ে যায়।
সেই ঘটনার পরই ভোররাত ২টো ৩০ মিনিট নাগাদ মসজিদে ঢুকে হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ এবং পুলিশের কাছে সেই খবর পৌঁছয় ভোর ৪টে নাগাদ।
পুলিশ সুপার এই প্রসঙ্গে বলেন, 'গ্রামের প্রধান আমাদের ফোন করেছিলেন। তিনিই জানান যে মসজিদের ভিতর বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। আমরা সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে যাই, অভিযোগকারীর বয়ান রেকর্ড করি। এবং সেই অনুসারে মামলা রুজু করা হয়। দুই অভিযুক্তে পরে গ্রেফতার করা হয়।'
এই ঘটনার পর স্থানীয় সংখ্য়ালঘু বাসিন্দাদের পক্ষ থেকে থানার বাইরে কিছুক্ষণ বিক্ষোভও দেখানো হয়।
পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অত্যন্ত কঠোর ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। ঘটনাস্থলে বম্ব স্কোয়াডকেও পাঠানো হয়েছে। ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ দল নমুনা সংগ্রহের কাজ করেছে। পুলিশের পক্ষ থেকে বাসিন্দাদের শান্তি বজায় রাখার আবেদন করা হয়েছে।