ধর্মের বেড়াজাল ভেঙে ও তথাকথিত ধর্মগুরুদের চোখরাঙানি উপেক্ষা করে যে প্রেমিক প্রেমিকারা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন, তাঁদের জীবন বাঁচাতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব দিল বম্বে হাইকোর্ট।
সোমবার এই প্রসঙ্গে আদালত প্রস্তাব দেয়, রাজ্যের প্রত্যেকটি জেলায় সরকারের যে গেস্ট হাউস বা অতিথিশালা রয়েছে, সেখানে কয়েকটি ঘর কেবলমাত্র সেইসব দম্পতিদের জন্য বরাদ্দ করা হোক, যাঁরা ভিন ধর্মের হয়েও পরস্পরকে বিয়ে করেছেন এবং তার জেরে জীবন সংশয়ের মুখে এসে দাঁড়িয়েছেন!
সংশ্লিষ্ট মামলার শুনানি চলাকালীন এই প্রস্তাব পেশ করেছে বম্বে হাইকোর্ট। আদালতের বক্তব্য হল, রাজ্য সরকারের ওই গেস্ট হাউসগুলিতে এমনতিতেই পুলিশ পাহারার বন্দোবস্ত থাকে। ফলত, সেখানে আলাদা করে পাহারা বসানোর দরকার নেই। কাজেই সেখানে এই ধরনের দম্পতিরা নিরাপদে থাকতে পারবেন।
এই প্রসঙ্গে রাজ্যের সামাজিক ন্যায় বিচার ও স্বরাষ্ট্র বিভাগকে নির্দিষ্টভাবে কিছু নির্দেশও দিয়েছে উচ্চ আদালত। তাদের সেইসব সরকারি অতিথিশালাগুলিকে চিহ্নিত করতে বলা হয়েছে, যেগুলিকে এক্ষেত্রে সেফ হাউস হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
বম্বে হাইকোর্টের নির্দেশ, এই প্রসঙ্গে ২০১৮ সালে কিছু গাইডলাইন তৈরি করে দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। রাজ্যের সেফ হাউসগুলিও সেই গাইডলাইন মেনেই চিহ্নিত করতে হবে।
এই মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে আগামী ২০ ডিসেম্বর। আদালতের নির্দেশ, তার মধ্যেই রাজ্য সরকারকে সেফ হাউস হিসাবে ব্যবহার করার জন্য সংশ্লিষ্ট সরকারি অতিথিশালাগুলি চিহ্নিত করে, তার তালিকা তৈরি করে ফেলতে হবে। এবং এই সংক্রান্ত নির্দেশিকার খসড়াও প্রস্তুত করতে হবে।
উল্লেখ্য, গত সোমবার বম্বে হাইকোর্টের বিচারপতি রেবতী দেরে এবং বিচারপতি শিবকুমার দিগের বেঞ্চে সংশ্লিষ্ট মামলাটি শুনানির জন্য উঠেছিল।
দুই বিচারপতি এই প্রেক্ষিতে আইনজীবীদের কাছ থেকেও পরামর্শ চেয়েছেন। তাঁদের নির্দেশ, এই ধরনের যেকোনও ঘটনার সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য একটি 'স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর' (এসওপি) তৈরি করা হোক।
এর পাশাপাশি, একটি হেল্পলাইন নম্বরও চালু করার কথা বলেছে বম্বে হাইকোর্ট। বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ ভিন ধর্মের দম্পতিরা যাতে বিপদের মুহূর্তে সবরকম সাহায্য ও সহযোগিতা পেতে পারেন, তার জন্যই এই হেল্পলাইন নম্বর চালু করার কথা বলা হয়েছে।
এছাড়াও, এমন দম্পতিদের সুরক্ষা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে একটি খসড়া প্রস্তাব তৈরি করার নির্দেশ দিয়েছে বম্বে হাইকোর্ট। প্রসঙ্গত, এই মামলায় আইনজীবী মিহির দেসাই এবং আইনজীবী লারা দেসাই নিরাপত্তা সংক্রান্ত একটি নোট আদালতে জমা করেছেন।
উল্লেখ্য, সংশ্লিষ্ট মামলায় যে দম্পতিকে প্রাণনাশের হমকির মুখে পড়তে হয়েছে, তাঁদের দু'জনেরই বয়স কুড়ির কোটায়। তাঁরা মুম্বইয়ে বিয়ে করলেও পরে প্রাণ ভয়ে দিল্লি পালাতে বাধ্য হন। এবং সেখানেই একটি সেফ হাউসে থাকতে শুরু করেন।