ধাত্রীগ্রামের পুজোয় এক অনন্য ছবি ধরা পড়ে। এই পুজোতে একসঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে থাকেন রাধারাণী এবং নূর আজাদরা। পুজোর প্রতিটা কাজ ওঁরা সকলেই এক সঙ্গে করে থাকেন। পুজোর চারটি দিনে দারুন সম্প্রীতির একটি ছবি ধরা পড়ে এই গ্রামে।
আপনি এই গ্রামের মণ্ডপে ঢুকলেই এবার দেখতে পাবেন প্রচুর মুখোশ, এক একটি মুখোশের সাইজ এক একরকমের। সমস্ত সদস্যরা পুজোর নানান সামগ্রী থেকে মণ্ডপ সজ্জা নিয়ে ভীষণই ব্যস্ত। এখানে যে শুধু পুজো হয় এমনটা নয়, মেলা বসে, সঙ্গে থাকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আর গোটা বিষয়টা দেখতে হয় প্রীতম, আখতারদের।
এই পুজো শুরু হয় ২০১৯ সালে। ধাত্রীগ্রামের যে ফুটবল মাঠ আছে সেখানেই শুরু হয় এই পুজো। কারা করে জানেন? ধাত্রীগ্রাম সম্প্রীতি সংস্থা। এই পুজোর নেপথ্যে রয়েছে ১৫ জন শিক্ষক সহ ৭০ জন স্থানীয় বাসিন্দা। প্রতিবাদ পুজোর আগে মিটিং বসে, ভাগ করে দেওয়া হয় কাজের দায়িত্ব। কে কোন দায়িত্ব সামলাবেন নিজেরাই ঠিক করে নেন। কে মণ্ডপের কাজ দেখবেন, কে যাবে চাঁদা তুলতে, আর কেই বা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য শিল্পী বাছাই করবেন নিজেরা ঠিক করে নেন।
এই পুজোর এ বছরের ঠিক হল দৃষ্টিতে নতুন সৃষ্টি। মণ্ডপের চারিদিকে কেবল চোখ। আর এই মণ্ডপ থেকে দর্শকদের কাছে বার্তা যাবে মায়ের কোল হল শিশুদের জন্য সব থেকে নিরাপদ আশ্রয়। কারা এই মণ্ডপ এবার তৈরি করেছে জানেন? পূর্বস্থলী ১ ব্লকের নিচু চাপাহাটির শিল্পীরা। এই পুজোর ফিতে কাটা হবে চতুর্থীর দিন।
এই গ্রামে প্রায় ১৫০টি পরিবার থাকে। এঁদের মূল জীবিকা হল হল দিনমজুরি এবং কৃষিকাজ। প্রতি বছর গ্রাম থেকেই যা চাঁদা ওঠে সেটা দিয়েই পুজো করা হয় কিন্তু এবার যেহেতু তেমন বৃষ্টি হয়নি, ফলে ফসল ভালো ফলেনি। কৃষকদের হাতে তেমন অর্থ না থাকায় চাঁদা ওঠেনি তেমন। ফলে পাশের গ্রামের এক ব্যবসায়ী এগিয়ে এসেছেন এই পুজোয় সাহায্য করতে। শেখ আবদুল লালন এই পুজোর অনেকটা দায়িত্ব এবার নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন সপরিবারে এসে এবার তিনি পুজোতে অঞ্জলি দেবেন।
এই পুজোয় দেবীকে প্রতিদিন ১৫-১৬টা করে নৈবেদ্য দেওয়া হয়ে থাকে। যে পরিবাররা এই পুজোর সঙ্গে যুক্ত থাকেন তাঁদের বাড়িতে এই নৈবেদ্য পাঠানো হয়।