প্রায় পাঁচ বছরের অপেক্ষার অবসান। একদিনের ব্যাবধানে অর্থাৎ ১০ই এপ্রিল রুপোলি পর্দায় মুক্তি পাচ্ছে ‘ময়দান’। পরিচালক অমিত শর্মার এই ছবিতে ভারতীয় ফুটবল কোচ সৈয়দ আবদুল রহিমের চরিত্রে অভিনয় করেছেন অজয় দেবগণ। এই ছবিতে চুনী গোস্বামীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন অমর্ত্য রায়। চৈতি ঘোষাল পুত্র বলিউড ডেবিউ সেরেছিলেন ‘২২ ইয়ার্ডস’ দিয়ে। ‘ময়দান’-এর সুবাদে বি-টাউনে আরও বড় এক্সপোজার পাচ্ছেন অর্মত্য। সোমবার রাতে ‘ময়দান’-এর প্রিমিয়ার শো মুম্বইতে। মা-কে নিয়ে সেখানেই হাজির হয়েছেন অমর্ত্য। সূদূর মুম্বই থেকে মুঠোফোনে হিন্দুস্তান টাইমস বাংলার সঙ্গে আড্ডা জমালেন নায়ক। আরও পড়ুন-‘আমি সবার প্রথম….’, কংগ্রেসের টিকিটে লোকসভা ভোটে লড়ছেন? জবাব দিলেন সঞ্জয় দত্ত
ময়দানের মুক্তি ঘিরে কতটা উত্তেজিত?
অমর্ত্য: প্রচণ্ড এক্সাইটেড, আবেগে পরিপূর্ণ। এই মুহূর্তে আমি মুম্বইতে রয়েছি। মুম্বইয়ের রাস্তাঘাটে, অলিতেগলিতে ময়দানের বড়বড় পোস্টার- সবটা দেখে অবিশ্বাস্য ঠেকছে। সত্যি বলতে কয়েকঘন্টার এই অপেক্ষাটা এবার লম্বা মনে হচ্ছে। আমি এবং আমার বন্ধুরা, যাঁরা ময়দানে অভিনয় করেছে সবাই লম্বা সময় ধরে এই ছবির মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছি।
দেশের ইতিহাসে সম্ভবত সেরা ফরোয়ার্ড চুনী গোস্বামী। তিনি বাংলা তথা বাঙালির আবেগ। তাঁর চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ, কতটা গর্বের?
অমর্ত্য: সেটা তো বলার অপেক্ষা রাখে না। এটা বিরাট বড় গর্বের ব্যাপার। ময়দানের জন্য যখন প্রথম ফোনটা আসে তখন দু'টে কথা বলা হয়েছিল- এক, অজয় দেবগণের একটা ছবি আসছে ফুটবলের স্বর্ণযুগ নিয়ে এবং দুই, চুনী গোস্বামীর চরিত্রে আমরা একটা ছেলেকে খুঁজছি। তখন থেকে আমি জান লাগিয়ে দিয়েছে যাতে এই চরিত্রটা আমিই পাই। আমার ফার্স্ট লুক থেকে বা ছোট্ট ঝলক দেখে দর্শক যে প্রতিক্রিয়া দিচ্ছে তাতে আমি আশাবাদী এবং গর্বিত। ছবি নিয়ে একটা ছোট্ট গল্প বলি….
নিশ্চয়….
অমর্ত্য: আমরা যখন মাড আইল্যান্ডে শ্যুট করতাম, আমাদের জন্য ওখানে একটা ফুটবল মাঠ তৈরি হয়েছিল। ভারতের এমব্লেম আঁকা ১০ নম্বর জার্সি আর ক্যাপ্টেনের আর্মব্যান্ডটা পরে আমি যখন মাঠে ঢুকতাম তখন অদ্ভূত একটা অনুভূতি হত। সেটা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না, তখন আমি সত্যি অমর্ত্য থাকতাম না। আমার কাছে ওই মুহূর্তটা গর্বের সেটা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
ছোটবেলা থেকে অজয় দেবগণের ছবি দেখে বড় হওয়া অর্মত্য, এখন তাঁর কো-স্টার! কী বলবেন?
অমর্ত্য: একদমই! আমি ছোট থেকেই অজয় দেবগণকে ইন্ডাস্ট্রির অন্যতম বড় স্টার হিসাবে দেখেছি। তাঁর সঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করা বিরাট প্রাপ্তি। অদ্ভূত একটা এনার্জি আর অউরা (aura) নিয়ে সেটে হাজির থাকতেন অজয় দেবগণ। ছবিটা দেখলে বোঝা যাবে, সৈয়দ আবদুল রহিমের চরিত্রটা খুব সিরিয়াস, ওঁনার মধ্যে একটা গাম্ভীর্য রয়েছে, সেটা অজয় দেবগণের মধ্যেও বিদ্যমান। অজয় দেবগণকে দেখে আমি অনুপ্রাণিত হয়েছি। তরুণ অভিনেতা হিসাবে আমার আরও অনেক কিছু দেওয়া উচিত সেটা উনি বুঝিয়ে দিয়েছেন হাড়ে হাড়ে। অজয় স্যারের সঙ্গে আমার অনেকগুলো ইমোশন্যাল দৃশ্য রয়েছে, তবে এখনই সেগুলো নিয়ে কথা বলতে পারব না।
চৈতি ঘোষাল পুত্র অমর্ত্য রায়। ইন্ডাস্ট্রিতে প্রিভিলেজেড- এটা কতটা বাড়তি চাপ হিসাবে কাজ করে?
অমর্ত্য: সে তো আমার মায়ের সঙ্গেও দাদুর (শ্যামল ঘোষাল) নাম জুড়ে আছে। পরিবারকে তো অস্বীকার করা যায় না। পারিবারিক উত্তরাধিকারটাকে আমি চাপ হিসাবে নয়, বরং সেটাকে অনুপ্রেরণা হিসাবে দেখতে চাই। আমার দাদু শ্যামল ঘোষাল সত্যজিৎ রায়, ঋত্বিক ঘটকের মতো কিংবদন্তিদের সঙ্গে কাজ করছেন। আমার মা শুধু পরিচিত অভিনেত্রী নন, বরং উনি একজন সম্মানিত এবং বুদ্ধিদীপ্ত অভিনেত্রী। আমার মনে হয় না, এটা নিয়ে চাপ নেওয়ার দরকার আছে। তার চেয়ে এটা ভাবি আমাকেও ওঁনাদের স্তরটা ছুঁতে হবে, সেটাই লক্ষ্য। মা-দাদু এঁরা আমার অনুপ্রেরণা।
আজ তো মায়ের জন্মদিন। জন্মদিনের দিন মা আমার হিন্দি ছবির প্রিমিয়ারের জন্য মুম্বইতে এসেছেন আমার সঙ্গে। এর চেয়ে বড় পাওনা আর কী হতে পারে! আসলে আমার চাপটা মা অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছেন, কারণ আমার পাশে বসে মা ছবিটা দেখবেন।

মা (চৈতি ঘোষাল) কি অমর্ত্যর সবচেয়ে বড় সমালোচক?
অমর্ত্য: একদম! মা আমার কাজের সবচেয়ে বড় সমালোচক আবার সবচেয়ে বড় প্রশংসকও বটে। ইন্ডাস্ট্রিটাকে মা ছোট থেকে দেখছে। আমাকে নিয়ে লাফালাফিটা শেষ মুহূর্তে করে, তার আগে পর্যন্ত কড়া টাস্ক মাস্টার। আমি যাতে ভুলটা থেকে শিখে এগোতে পারি সেই পথটা মা দেখিয়ে দেয়।
'ময়দান' অভিনেতা অমর্ত্য রায়কে কী শেখালো?
অমর্ত্য: এই ছবিতে অজয় দেবগণ, গজরাজ রাও-সহ সিনিয়র অভিনেতাদের থেকে আমি একটা জিনিস শিখেছি, সংলাপ বলার মধ্যে শুধু ইনটেনসিটি থাকবে তা নয়, চোখের অভিব্যক্তিতে বা বডি ল্যাঙ্গুয়েজের মধ্যেও ইনটেনসিটি থাকবে। অজয় স্যার তো এই কাজের মাস্টার। সেটা খুব কাছ থেকে দেখেছি, শেখার চেষ্টা করেছি। উনি কীভাবে নিজেকে ধরে রেখেছেন সেটা কাছ থেকে দেখার সুযোগ পাওয়াটা বড় বিষয়।
আমাদের পরিচালক অমিত শর্মাকে আমি মুগ্ধ হয়ে দেখতাম, একটা লোক ৪৫০ জনের একটা ইউনিটকে কী করে হ্যান্ডেল করছে। গোটা দেশের পালসটা কীভাবে উনি পর্দায় ধরার চেষ্টা করছেন সেটা শেখার চেষ্টা করেছি। কারণ আমিও এফটিআই (পুনে) থেকে ফিল্ম স্টাডিজ পড়েছি। তবে এটা একদম প্র্যাক্টিক্যাল শিক্ষা। শরীর সঙ্গ না দিলেও মনের জোর কীভাবে ধরে রাখতে হয়, সেটাও ময়দান আমাকে শিখিয়েছে।
'ময়দান' থেকে এখনও পর্যন্ত সেরা প্রাপ্তি কী?
অমর্ত্য: গতকাল একটা স্পেশ্যাল স্ক্রিনিং হয়েছিল, সেখানে চুনী গোস্বামীর স্ত্রী বাসন্তী দেবী উপস্থিত ছিলেন। ছবির শেষে ওঁনার চোখে জল ছিল। তিনি আমাকে ডেকে বললেন, চুনী গোস্বামী থাকলে খুব খুশি হতেন। আমার জন্য এর চেয়ে বড় পাওনা কী হতে পারে! আমার সৌভাগ্য হয়েছে ওঁনার স্বামীর তরুণ বয়সটা পর্দায় তুলে ধরার, সেই জার্নি দেখে উনি কেঁদেছেন। এটাই তো সবচেয়ে বড় অ্যাওয়ার্ড।