যা নয় তাই অভিনয়, 'একেনবাবু' আর অনির্বাণ চক্রবর্তীর মধ্যের পার্থক্যটা ঠিক এতটাই। তবে পর্দায় 'একেন' রূপে অভিনেতাকে দেখে বোঝার উপায় নেই যে তিনি বাস্তবে মোটেই খাদ্যরসিক নন, বরং শরীর বুঝে নিয়মের মধ্যে থেকে খাওয়া যাওয়া করাতেই বিশ্বাসী। কিন্তু কেবল এটুকুই নয়, 'একেন'-এর সঙ্গে অনির্বাণে ফারাক আরও অনেকটা। তবে 'একেন'-এর পজেটিভি অভিনেতাকে উৎসাহ জোগায়। পরপর এতগুলো ছবি ও সিরিজ করার পর, বর্তমানে 'একেন' আর অনির্বাণের সমীকরণটা ঠিক কেমন? 'দ্য একেন: বেনারসে বিভীষিকা'-এর সাফল্যের মাঝেই হিন্দুস্তান টাইমস বাংলার সঙ্গে ভাগ করে নিলেন অভিনেতা।
কলকাতায় এত গরম, তার মধ্য হল ভিজিট, খুব চাপ যাচ্ছে নিশ্চয়ই?
অনির্বাণ: কলকাতায় গরম তো থাকেই, কিন্তু তাতে সত্যি কিছু করার নেই। তবে হল ভিজিটে যাচ্ছি যখন, তখন দর্শকদের মধ্যে এত উচ্ছ্বাস দেখে আর বাকি কিছু মনে থাকছে না। এত ভালো সাড়া পাচ্ছি যে, যা যা পরিশ্রম হচ্ছে সব ভুলে যাচ্ছি।
তবে অনেকের মতে বড় পর্দায় আগে দু'বার 'একেন'-এর গল্প যে ভাবে তুলে ধরা হয়েছিল, তার থেকেও অনেক বেশি ভালো করে দেখানো হয়েছেন 'দ্য একেন: বেনারসে বিভীষিকা'তে...
অনির্বাণ: হ্যাঁ, তা অনেকে বলছেন বটে। আসলে আমরা অভিনেতারা, আমাদের পরিচালক, প্রযোজনা সংস্থা, সমস্ত টেকনিশিয়ান সবাই মিলে চেষ্টা করি আগের থেকে আরও ভালো ভাবে কীভাবে করা যায়। এতবার ছবি ও সিরিজের মাধ্যমে 'একেন' পর্দায় এসেছে। মানুষ তাকে এত ভালবাসা দিয়েছে, সেটা আমাদের কাছে আনন্দের তো বটেই, পাশাপাশি আমাদের দায়িত্বও আরও খানিকটা বাড়িয়ে দিয়েছে। তাই সেই চেষ্টা থেকেই আমরা আগের থেকেও আরও ভালো ভাবে সবটা করার চেষ্টা করি। আর এবার যে সেটা আমরা সফল ভাবে করতে পেরেছি, এতেই আমরা খুব খুশি। আসলে কী জানেন তো, একেন'-এর চরিত্রটার সঙ্গে দর্শকরা সব সময়ই খুব একাত্ম বোধ করেন, সেটার কারণেই আমার মনে হয় এটা পথ আসা সম্ভব হয়েছে।
এতবার একটা চরিত্র করা, ফলে আপনি 'একেন'কে যে আত্মস্থ করে ফেলেছেন তা তো বলাই বাহুল্য, কিন্তু যখন প্রথম একেন হয়ে ওঠার সুযোগ যখন আসে সেই সময়টা মনে পড়ে এখনও?
অনির্বাণ: যখন আমরা প্রথম সিরিজটায় কাজ শুরু করি, তখন আমরা কেউই এটা ভাবতে পারিনি যে এরপর 'একেন' এতটা সাফল্য পাবে। কোনও ওয়েব সিরিজ এতটা জনপ্রিয়তা পেয়েছে এরকম উদাহরণ বাংলায় নেই বললেই চলে। আর যদি বিশ্বব্যাপী দেখি তাহলে জনপ্রিয় সিরিজ তো অনেক হয়েছে। তবে সেটা থেকে ছবি বানানো হয়েছে এটা খুব একটা শোনা যায় না। এগুলো তখন আমরা কল্পনাও করতে পারিনি। শুরুতে আমরা কেউই জানতাম না যে এর দ্বিতীয় সিজন আনা হবে কিনা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দর্শকদের ভালোবাসায় এত অল্প সময় আমারা এতগুলো সিরিজ ও ছবি আনতে পারলাম।
'একেনবাবু' চরিত্রটা আপনাকে কী কী দিয়ে গেল?
অনির্বাণ: 'একেন' আমাকে পরিচিতি দিয়েছে। এটা আমার করা প্রথম বড় চরিত্র। আর আমি তো ফিল্ম ইন্ড্রাস্টির বাইরে থেকে আসা একটা মানুষ ছিলাম, তো 'একেন' যে রকম আমাকে দর্শকদের কাছে একটা পরিচিতি দিয়েছে, তেমনই অন্যান্য পরিচালক, প্রযোজকদের কাছেও কিন্তু এই চরিত্রটাই আমাকে অনেকটা পৌঁছে দিয়েছে।
বাঙালির কাছে 'একেন' বলতে এখন আপনিই, তাই বাস্তবেও দর্শকরা অনেক ক্ষেত্রেই আপনাকে একেনের মতোই ভেবে নেন... তবে আপনি তো একেবারে তার বিপরীত?
অনির্বাণ: হ্যাঁ, আমি একেবারেই 'একেন'-এর মতো নই। প্রায় সব দিক থেকেই আলাদা।
অনেকবার আপনাকে বলতেও শোনা গিয়েছে 'একেন' খুব ন্যাগিং করে, আর সেটা আপনার একদম পছন্দ নয়, কিন্তু এমন কী কিছু গুণ ওর আছে, যা আপনার ভালো লাগে?
অনির্বাণ: হ্যাঁ, তেমন তো প্রচুর গুণ আছে 'একেন'-এর মধ্যে। এই চরিত্রটার মধ্যে প্রচুর পজেটিভিটি আছে। 'একেন' সব সময় হাসি মুখে থাকে। কখনও খুব সিরিয়াস হয়ে পড়ে না। পাশে যাঁরা থাকে, তাদেরও উৎসাহ দেয়। 'একেন'-এর মধ্যে একটা সরলতা আছে, একটা শিশুসুলভ ভাব রয়েছে। এগুলো সবই যেগুলো 'একেনবাবু'র কাছ থেকে পাওয়া যেতে পারে। ‘একেন’-এর মধ্যে নেতিবাচকতা নেই। হ্যাঁ, কিছু কিছু বিষয় আছে যেগুলো হয়তো আমি বাস্তবে কখনও করা পছন্দ করি না। তবে ওর মধ্যে একটা ছেলেমানুষি রয়েছে।
'একেন' তো খুবই খাদ্যরসিক, তবে যতটা শুনেছি, আপনি আবার তেমনটা নন?
অনির্বাণ: হ্যাঁ, আমি একেবারেই খাদ্যরসিক নই।
তাহলে খাবারের দৃশ্যগুলো করতে নিশ্চয়ই বেশ সমস্যা হয়...
অনির্বাণ: হ্যাঁ, সেটা একটু কষ্টকর হয়ই। কারণ আমরা খাবার দৃশ্যে শ্যুটিং যখন করি, তার অনেকটা আগে থেকে খাবারগুলো এনে রাখা হয়। স্বাভাবিক ভাবেই সেগুলো ঠান্ডা হয়ে যায়। তারপর মটন খাবার দৃশ্য যখন থাকে, সেটা আমার জন্য একটু সমস্যার হয়, কারণ আমি মটন খাই না। তাছাড়াও বেশ কিছু খাবার আছে, যেগুলো আমি খাই না। আবার অনেক ক্ষেত্রে পর পর তিনটে খাবারের দৃশ্য করতে হয়, সেগুলো, যে কোনও মানুষের পক্ষেই কষ্টকর। আসলে কী জানেন তো, শ্যুটিংয়ে খাবার খাওয়ার অভিজ্ঞতা কখনোই ভালো হয় না। এমনকী যাঁরা খেতে ভালোবাসেন, তাঁদের জন্যও হয় না।
কিন্তু বেনারসে তো অলি গলিতে নানা ধরনের খাবার মেলে, শ্যুটিং চলাকালীন না হোক, কাজের ফাঁকে ফাঁকে কি একটুও কিছু চেখে দেখা হয়নি?
অনির্বাণ: এবার শ্যুটিং চলাকালীন আর আলাদা করে কিছু খাওয়ার সুযোগ পাইনি। তবে বেনারসে আমি আগে অনেকবার গিয়েছি। তখন ওখানকার সব খাবার চেখে দেখেছি। হ্যাঁ আমি খাদ্যরসিক নই বটে, কিন্তু আমার খাবারের প্রতি একটা আগ্রহ অবশ্যই রয়েছে। এমন নয় যে, আমি খাবার অপছন্দ করি। তাই বেনারসে যখন গিয়েছিলাম ওখানকার সব জনপ্রিয় দোকানের বিখ্যাত সব খাবার আমি চেখে দেখেছিলাম।
তবে খাবার ছাড়া 'একেন' মনে হয় ঘুরতেও বেশ পছন্দ করে, আপনি ঘুরতে কতটা ভালোবাসেন?
অনির্বাণ: আমি ঘুরতে খুবই পছন্দ করি। আমি পাহাড় খুব পছন্দ করি, তবে সমুদ্র আবার আমাকে খুব একটা টানে না। তবে ঘুরতে যেতে চাই যতটা, ততটা ঘুরতে সময় পাই না।
হ্যাঁ, কাজের তো চাপে ঘুরতে যাওয়াটা সত্যি মুশকিলের, তবে কাজের সূত্রেও তো অনেক জায়গা ঘোরা হয়ে যায়?
অনির্বাণ: সেই জায়গাগুলোয় যাওয়া হয় বটে তবে ঘোরাটা খুব একটা হয় না। আসলে কাজের জন্য কোথাও যাওয়া আর ঘোরাটা তো এক নয়। এই বছরও যেমন অনেক জায়গায় গিয়েছি, কিন্তু সেটা ঠিক ছুটি কাটাতে যাইনি।
তবে পর পর তো অনেক কাজ করলেন, এখনও করছেন সবটা সামলাতে গিয়ে কখনও কখনও কি খুব চাপ বোধ হয় কি?
অনির্বাণ: হ্যাঁ মাঝে মাঝে তো সত্যি চাপ হয়ে যায়। কিন্তু আমি একটা কথা বিশ্বাস করি যে কোনও কাজ যদি ভালোবাসা যায় তাহলে তার জন্য ঠিক সময় বেরিয়ে যায়। আমি যেহেতু আমার কাজটা করতে পছন্দ করি। শুধু মাত্র এটা আমার পেশা তা কিন্তু নয়, এই কাজটার প্রতি আমার একটা ভালোবাসাও আছে, সেই জন্য আমি শারীরিক ভাবে হয়তো কখনও ক্লান্ত হয়ে পড়লেও, মানসিক ভাবে কখনও ক্লান্ত হয়ে পড়ি না।