ইতিহাস গড়ল আফগানিস্তান। একদিনের ইতিহাসে প্রথমবার পাকিস্তানকে হারালেন আফগানরা। ৭-০ থেকে ৮-০ হতে দিলেন না। করলেন ৭-১। শেষ কয়েকবার জয়ের দোরগোড়ায় চলে এসেও ‘ফাইনাল হার্ডল’ পার করতে পারছিলেন না। কিন্তু সোমবার বিশ্বকাপের মঞ্চে কোনও ভুল হল না আফগানিস্তানের। ছয় বল বাকি থাকতে জিতল আট উইকেটে। আর সেইসঙ্গে বিশ্বকাপের ইতিহাসে চরম লজ্জার মুখে পড়লেন বাবর আজমরা। বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এত রান তাড়া করে কোনও দল জিততে পারেনি। এতদিন একদিনের বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের নজির ছিল ভারতের দখলে। ২০০৩ সালের বিশ্বকাপে সেই নজির গড়েছিল ভারত।
পাকিস্তান বনাম আফগানিস্তান ম্যাচে
সোমবার টসে জিতে প্রথমে ব্যাটিং নিয়ে নির্ধারিত ৫০ ওভারে সাত উইকেটে ২৮২ রান তোলে পাকিস্তান। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা মন্দ হয়নি পাকিস্তানের। ১০ ওভারে ৫৬ রান তুলে ফেলেন ইমাম-উল-হক এবং আবদুল্লা শফিক। একাদশ ওভারের প্রথম বলেই সেই জুটি ভাঙেন নুর আহমেদ। যিনি বিশ্বকাপের কনিষ্ঠতম খেলোয়াড়। তবে ইমামের উইকেট পেলেও দ্বিতীয় উইকেটে ভালো জুটি গড়ে তোলেন আবদুল্লা এবং বাবর। দ্বিতীয় উইকেটে ৫৪ রান যোগ করেন তাঁরা। ৭৫ বলে ৫৮ রান করে আবদুল্লা আউট হয়ে গেলেও পাকিস্তানকে টানতে থাকেন বাবর।
তবে বড় কোনও জুটি ওঠেনি। বরং রানের গতি ক্রমশ কমে যায়। ৪২ তম ওভারের পঞ্চম বলে বাবর আউট হতেই আদতে পাকিস্তানের রানের গতি বাড়ে। ৯২ বলে ৭৪ রান করে যখন বাবর আউট হয়ে যান, তখন পাকিস্তানের স্কোর ছিল পাঁচ উইকেটে ২০৬ রান। তারপর রানের গতি বাড়ান ইফতিকার আহমেদ এবং শাদাব খান। ষষ্ঠ উইকেটে জুটিতে তাঁরা ৪৫ বলে ৭৩ রান যোগ করেন। ২৭ বলে ৪০ রান করেন ইফতিকার। ৩৮ বলে ৪০ রান করেন শাদাব। তাঁদের সৌজন্যেই ২৮০ রানের গণ্ডি পার করে পাকিস্তান।
প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছিল যে সেই রানটা আফগানিস্তানের জন্য কিছুটা বেশি হয়ে গিয়েছে। কিন্তু রহমানউল্লাহ গুরবাজ এবং ইব্রাহিম জারদানের একেবারেই সেটা মনে হয়নি। ব্যাটিংয়ের দুর্বলতা নিয়ে যখন একাধিক প্রশ্ন ছিল, তখন দুর্দান্ত শুরু করেন তাঁরা। বেধড়ক মারতে থাকেন। বিশেষত হ্যারিস রউফের প্রথম ওভারেই ১৭ রান তুলে নিজেদের মনোভাব স্পষ্ট করে দেন। শেষপর্যন্ত প্রথম উইকেটে ২১.১ ওভারে তাঁরা ১৩০ রান যোগ করেন। ৫৩ বলে ৬৫ রান করে আউট হয়ে যান গুরবাজ।
শাহিন শাহ আফ্রিদি পাকিস্তানকে আশা দেখালেও রহমত শাহ এবং জারদানরা স্নায়ু ধরে রাখেন। দ্বিতীয় উইকেটে গুরুত্বপূর্ণ ৬০ রান যোগ করেন। কিন্তু ৩৩.৩ ওবারে হাসান আলির বলে আউট হয়ে যান জারদান। ১১৩ বলে ৮৭ রান করেন। তারপরও একটা সুযোগ এসেছিল পাকিস্তানের কাছে। রহমত এবং হাশমতউল্লাহ শাহিদি অবশ্য তখন বাবর, শাহিনদের সেইসব সুযোগ দেখতে পাননি। বরং তাঁদের সামনে একটাই জিনিস ছিল - ইতিহাস।
আর সেই লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে থাকেন রহমত এবং হাশমতউল্লাহ। চিপকের মাঠের যে কোণ আছে, সেটার ব্যবহার করতে থাকেন। তাঁদের যথেষ্ট সাহায্যও করেন পাকিস্তানের ফিল্ডাররা। পুরো মিসফিল্ডিং করেন। শেষপর্যন্ত তৃতীয় উইকেটে তাঁরা অপরাজিত ৯৬ রান যোগ করে আফগানিস্তানকে ঐতিহাসিক ম্যাচে জেতান। ৮৪ বলে ৭৭ রান করেন রহমত। ৪৫ বলে ৪৮ রান করেন অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ।