আদালতের সমস্ত কর্মকাণ্ডে তথ্যপ্রযুক্তির যথেচ্ছ ব্যবহার মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। এই বিষয়ে অবস্থান স্পষ্ট করে পুলিশ প্রশাসন এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলিকে সচেতন করল শীর্ষ আদালত। মানতে বলল নির্দিষ্ট নিয়ম।
সুপ্রিম কোর্টের সাফ নির্দেশ, ভারতীয় ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৪১এ এবং ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতার ৩৫ নম্বর ধারা অনুসারে, কোনও ব্যক্তি স্বীকৃত অপরাধে অভিযুক্ত হলে তাঁদের যেন হোয়াট্সঅ্যাপ মেসেজ কিংবা অন্য কোনও বৈদ্যুতিন যোগাযোগমাধ্যমের দ্বারা প্রি-অ্যারেস্ট নোটিশ বা গ্রেফতারি পূর্ববর্তী নির্দেশিকা না পাঠানো হয়।
প্রসঙ্গত, এই দু'টি ধারাতেই স্পষ্ট করে নির্দেশ দেওয়া আছে, মামলার তদন্তকারী আধিকারিককেই অভিযুক্ত নারী বা পুরুষটিকে হাজির হতে বলে প্রথম নোটিশ দিতে হবে। যদি সেই নোটিশ পেয়ে অভিযুক্ত হাজিরা দেন এবং তদন্তে পূর্ণ সহযোগিতা করেন, তাহলে তাঁকে গ্রেফতার করা যাবে না।
অথচ, পুলিশ ও তদন্তকারীদের একাংশ এই নিয়ম যথাযথভাবে পালন করছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে বিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের তরফে। তাদের বক্তব্য, বিভিন্ন মামলায় ভারতীয় ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৪১এ ধারা অনুসারে, তদন্তকারী আধিকারিকদের একাংশ অভিযুক্তদের এই নোটিশ দিচ্ছেন না।
বিষয়টি নিয়ে শীর্ষ আদালতে একটি প্রস্তাব পেশ করেছেন আদালত বন্ধু তথা প্রবীণ আইনজীবী সিদ্ধার্থ লুথরা। বিচারপতি এম এম সুন্দ্রেশ এবং বিচারপতি রাজেশ বিন্দলের বেঞ্চ তাঁর সেই প্রস্তাব গ্রহণ করে।
এরই প্রেক্ষিতে আদালত জানিয়ে দেয়, প্রত্যেকটি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের প্রশাসনের অধীনে থাকা পুলিশের কর্তব্যরত আধিকারিকদের এই ধরনের ক্ষেত্রে ১৯৭৩ সালের ভারতীয় ফৌজদারি আইনের ৪১এ এবং ২০২৩ সালের ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতার ৩৫ নম্বর ধারা অনুসারে আগে সংশ্লিষ্ট নোটিশ জারি করতে হবে।
একইসঙ্গে আদালত জানিয়ে দিয়েছে, এক্ষেত্রে যদি এই নোটিশ হোয়াট্সঅ্য়াপ বা অন্য কোনও বৈদ্যুতিন যোগাযোগ ব্যবস্থা বা প্রযুক্তির মাধ্যমে পাঠানো হয়, তাহলে তা আইনত গ্রাহ্য করা হবে না। ১৯৭৩ সালের ভারতীয় ফৌজদারি আইনের ৪১এ এবং ২০২৩ সালের ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতার ৩৫ নম্বর ধারায় যে নির্দিষ্ট নিয়মের উল্লেখ করা আছে, সেই অনুসারেই এই প্রি-অ্য়ারেস্ট নোটিশ পাঠাতে হবে।
এই মামলা প্রসঙ্গে আইনজীবী লুথরা সুপ্রিম কোর্টে পুরোনো একটি রায়দানের উল্লেখ করেন। যেখানে আদালত স্পষ্ট বলে দিয়েছিল, যদি কোনও ব্যক্তির বিরুদ্ধে এমন কোনও স্বীকৃত অপরাধ করার অভিযোগ ওঠে, যা প্রমাণিত হলে সাত বছরের কম কারাবাসের শাস্তি হতে পারে, সেক্ষেত্রে কোনও অবস্থাতেই ১৯৭৩ সালের ভারতীয় ফৌজদারি আইনের ৪১এ নম্বর ধারা অনুসারে নোটিশ না পাঠিয়ে তাঁকে গ্রেফতার করা যাবে না।