প্রবল ধাক্কায় উড়ে গিয়েছে গোটা ছাদ। সেই 'ন্যাড়া' বাস নিয়েই প্রায় ৫ কিলোমিটার পথ, বাসে বসে থাকা আতঙ্কিত, সন্ত্রস্ত যাত্রীদের কার্যত 'উড়িয়ে নিয়ে গেলেন' চালক! শেষমেশ বাস থামালেন অন্ধকারে ডুবে থাকা এক গ্রামে! আর তারপরই ধাঁ! যেন বেমালুম উবে গেলেন চালক ও তাঁর সহকারী! হাঁফ ছেড়ে বাঁচালেন বাসের অবশিষ্ট যাত্রীরাও। 'অবশিষ্ট', কারণ - এই ভয়াবহ 'অভিযান' চলাকালীন যখনই কোনও জায়গায় কোনও কারণে বাসের গতি একটু কমেছে, যাত্রীদের অনেকেই প্রাণ বাঁচাতে চলন্ত বাস থেকে ঝাঁপ মেরেছেন রাস্তায়! পরে জখম অবস্থায় তাঁদের উদ্ধার করেছে পুলিশ ও দমকলবিভাগ!
গোটা ঘটনা ঘিরে শোরগোল পড়ে গিয়েছে বাংলাদেশের মুন্সীগঞ্জ এলাকায়। এখনও পর্যন্ত এই ঘটনায় তিনজনের বিরুদ্ধে পরিবহণ আইনে মামলা রুজু করেছে পুলিশ। অভিযুক্তরা হলেন - বাসের চালক, খালাসি বা সহকারী এবং বাসের মালিক। যদিও প্রাথমিকভাবে তাঁদের তিনজনকেই পুলিশের খাতায় 'অজ্ঞাতপরিচয়' হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যম অনুসারে - দুর্ঘটনাগ্রস্ত ওই বাসটির নাম 'বরিশাল এক্সপ্রেস'। গত বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল, ২০২৫) স্থানীয় সময় রাত ৮টা নাগাদ দ্রুত গতির বাসটি প্রথম দুর্ঘটনা ঘটায়। যাত্রীদের অভিযোগ, দ্রুত গতিতে থাকায় বাসটি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিলেন না চালক। ফলত, সামনে থাকা একটি মাইক্রো বাস এবং অন্য একটি গাড়িকে ধাক্কা মারেন তিনি।
এই ঘটনাটি ঘটে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের কামারখোলা রেল ফ্লাইওভারে। ঘটনাচক্রে সেই সময় এই বাসের ঠিক পিছনেই ছিল পুলিশ ও সেনাবাহিনীর গাড়ি। এদিকে, ধাক্কার চোটে ততক্ষণে বাসে সামনের বেশ খানিকটা অংশ দুমড়ে গিয়েছে। পিছনে পুলিশ ও সেনা দেখে বাসের গতি আরও বাড়িয়ে দেন চালক।
এর জেরেই বাসটি সজোরে ধাক্কা মারে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের রেলিংয়ে। সেই সংঘর্ষের অভিঘাত এতটাই বেশি ছিল যে - বাসের আস্ত ছাদটাই উড়ে যায়! এতে ভয় পেয়ে যান যাত্রীরা। তাঁরা চেঁচামিচি শুরু করে দেন। বাস থামানোর জন্য চালককে অনুরোধ করেন। জবাবে বাসের গতি আরও বাড়িয়ে দেন চালক। এবং কার্যত রকেটের গতিতে প্রায় ৫ কিলোমিটার রাস্তা উজিয়ে একটি গ্রামের মধ্যে ঢুকে পড়েন। গ্রামটি অন্ধকার থাকায়, সেই সুযোগেই চালক ও তাঁর সহযোগী বাস থেকে নেমে বেপাত্তা হয়ে যান।
এসবের মধ্যেই বেশ কয়েকজন যাত্রী প্রাণ বাঁচাতে বাস থেকে ঝাঁপ মারেন। তাঁদের কারও প্রাণ না গেলেও সকলেই কম বেশি আহত হয়েছেন। তেমনই আটজন আহত যাত্রীকে পরে রাস্তার আশপাশ থেকে উদ্ধার করা হয়!
পরবর্তীতে,গতকাল (শুক্রবার - ১৮ এপ্রিল, ২০২৫) হাসাড়া হাইওয়ে থানায় পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) আতাউর রহমান এই ঘটনায় একটি মামলা রুজু করেন। ঘটনার সত্যতা বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যমের কাছে স্বীকার করেছেন হাসাড়া হাইওয়ে থানার ইনচার্জ আবদুল কাদের জিলানি।
তিনি জানিয়েছেন, দুর্ঘটনাগ্রস্ত বাসটিকে বাজেয়াপ্ত করে থানায় এনে রাখা হয়েছে। বাসের চালক, তাঁর সহকারী ও বাসমালিককে চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে।