ভারতে ঘুরতে এসেই নাকি ভারত নিয়ে মোহভঙ্গ হল ভারতীয় বংশোদ্ভূত এক ব্রিটিশ নাগরিকের। যা নিয়ে সোশাল মিডিয়ায় সরব হয়েছেন তিনি। তুলে ধরেছেন নিজের ভারত ভ্রমণের অভিজ্ঞতা। একইসঙ্গে তুলে ধরেছেন ভারতের নানা খুঁত।
ভারতীয় বংশোদ্ভূত ওই ব্রিটিশ নাগরিক একটি তিনবছরের সফরে বেরিয়েছিলেন। যার উদ্দেশ্য ছিল, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সারা ভারত চষে ফেলা। আর সেটা করতে গিয়ে এমন সব অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছেন তিনি, যার জেরে তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, আর কখনও এই দেশে আসবেন না।
বস্তুত, তাঁর মনে হয়েছে, ভারতের থেকে ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ডে ঘোরা ঢের ভালো। অথচ, তাঁর মনে হয়েছিল, ভারত ভ্রমণের এই স্মৃতি তাঁর কাছে চিরকালই সুখস্মৃতি হয়ে থাকবে। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন ভারতের বেহাল পরিকাঠামো এবং ভারতীয়দের সিভিক সেন্সের অভাব নিয়ে।
ওই ব্যক্তি লিখেছেন, ‘ভারতবর্ষ একটি আবর্জনা। এবং ভারতীয়রাই বস্তুনিষ্টভাবে এই দেশটির সঙ্গে আবর্জনার মতো আচরণ করেন!...’
ভারতীয়দের মধ্যে যে নাগরিক সচেতনতা ও দায়িত্ববোধের চূড়ান্ত অভাব রয়েছে, সেকথা উল্লেখ করেছেন ওই ব্যক্তি। লিখেছেন, ভারত 'বিশ্বের পঞ্চম ধনীতম অর্থনীতির দেশ। সেখানে প্রায় ১৬০ কোটি মানুষ বসবাস করেন। এবং অদ্ভূত বিষয় হল, সেদেশে একটি বিশেষ ধনী জনসংখ্য়া রয়েছে। কিন্তু, তাতে কিছু যায় আসে না।'
তিনি লিখেছেন, কীভাবে ভারতীয়রা দেশের ঐতিহাসিক ও দ্রষ্টব্য স্থানগুলিকে নষ্ট করেন! কীভাবে সেই স্থানগুলি অবহেলার শিকার হচ্ছে। তিনি লিখেছেন, 'যে ঐতিহাসিক স্থাপত্যগুলি নিয়ে ভারতীয়দের গর্ব করা উচিত ছিল, সেগুলির গায়ে গ্রাফিতি করা হয়েছে। দেওয়ালে হলুদ থুতুর দাগ সর্বত্র। যেখানে-সেখানে পচা খাবার পড়ে রয়েছে।'
এমনকী, বিদেশি পর্যটক বুঝতে পারলেই কীভাবে ভারতের হোটেলগুলি তাঁদের লুট করার চেষ্টা করে, তারও বিস্তারিত ব্যাখ্য়া দিয়েছেন ওই ব্যক্তি। লিখেছেন, 'খুব সাদামাটা হোটেল, সেগুলি এমন জায়গায় রয়েছে, যেখানে একমাসের থাকার ভাড়া খুব বেশি হলে ৩০০ মার্কিন ডলার হওয়া উচিত, অথচ, ফিরিঙ্গি পর্যটক দেখলেই এক রাতের থাকার ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ মার্কিন ডলার!'
নিজের এই ভারত ভ্রমণের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেওয়ার পরই তিনি লিখেছেন, 'আমার ভারতে ঘোরার শখ মিটে গিয়েছে। বিশ্বাস করুন। আমি ভীষণভাবে একবার অন্তত চেষ্টা করেছিলাম।'
ভারত ভ্রমণ সেরে ওই ব্যক্তি পৌঁছন ভিয়েতনামে। তার বক্তব্য, সেখানে পৌঁছতে যেন ধরে প্রাণ ফিরে পেয়েছিলেন তিনি। ভিয়েতনামের সুন্দর রাস্তাঘাট, নির্ভরযোগ্য ট্যাক্সি পরিষেবা, খুব ভালো মানের খাবার - ভারতের থেকে ঢের ভালো ছিল বলে প্রশংসাও করেছেন ওই পর্যটক।
তিনি লিখেছেন, 'আমি নিজে একজন ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক। আমি সত্যিই ভারতকে ভালোবাসতে চেয়েছিলাম। কিন্তু, আমি পারলাম না।'
খুব স্বাভাবিকভাবেই এই পোস্ট ইতিমধ্যেই ভাইরাল হয়েছে সোশাল মিডিয়ায়। এবং সেখানে আড়াআড়ি বিভাজন স্পষ্ট। একদল মনে করছে, ওই পর্যটক সম্পর্কে একেবারে সত্যি কথা বলেছেন। এবং আগামী দিনে এই ত্রুটিগুলি ভারতের বা ভারতীয়দের সংশোধন করে নেওয়া উচিত।
আর একদল অবশ্য এসব শুনতে রাজি নয়। তারা ঝাঁপিয়ে পড়েছে ভারতকে এই সমস্ত অভিযোগ থেকে আড়াল করতে।