বাংলাদেশিরা যে ভারতে অনুপ্রবেশ করে, সেই কথা কার্যত মেনে নিয়েই ভারতকে পালটা হুঁশিয়ারি দিলেন বিজিবি প্রধান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকি। কয়েকদিন আগেই দিল্লিতে বিজিবি-বিএসএফ সম্মেলন হয়েছিল। সেই সময় সীমান্তে কাঁটাতার দেওয়া নিয়ে ইতিবাচক বার্তা দিয়েছিল বিজিবি। আর এবার বিজিবি প্রধান 'সীমান্ত হত্যা' নিয়ে বাহিনীর প্রধান বললেন,'সীমান্ত হত্যা কোনওভাবে কাম্য নয়।' (আরও পড়ুন: বাংলাদেশের হবিগঞ্জে ১০৮ কণ্ঠে গীতাপাঠ, পটুয়াখালিতে হল মতুয়া মহোৎসব)
আরও পড়ুন: 'রাজনীতির আগে আমার পরিচয়- আমি মুসলিম', বললেন বাংলাদেশের নয়া দলের নেতা হাসনাতের
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) মহম্মদ জাহাঙ্গির আলম চৌধুরীর উপস্থিতিতে বিজিবি প্রধান বলেন, 'সীমান্ত হত্যা নিয়ে আলোচনা হয় দিল্লিতে। বাংলাদেশিরা যাতে ভারতে অনুপ্রবেশ না করে, তার জন্যে আপ্রাণ চেষ্টা করছি আমরা। তবে আমরা দেখতে পেয়েছি (ত্রিপুরার সিপাহিজালা) ১৫-২০ জন অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশ করছিল। তখন বিএসএফ বাধা দেওয়ার পরে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘাত হয়। সেই সংঘাতে বিএসএফ রাবার বুলেট ছোড়ে। এতে এক যুবকের পেটে লাগে। সেই যুবককে নিয়ে গিয়ে হাসপাতালে অপারেশন করিয়েছিল। তবে সে বাঁচেনি। এ ঘটনায় একজন বিএসএফ সদস্য আহত হয়েছেন। তিনি হাসপাতালে আছেন।' এরপরও তিনি বলেন, 'অবৈধ অনুপ্রবেশ হোক আর যা-ই হোক, হত্যা কোনও সমাধান নয়। এপর আর একটি হত্যাও যদি হয়, তাহলে আমরা কঠোর অবস্থান গ্রহণ করব।' (আরও পড়ুন: এবার মুম্বই-বেঙ্গালুরুর মতো কলকাতা লাগোয়া এলাকায় অ্যাপে বুক করা যাবে অটো?)
আরও পড়ুন: 'চিনের জন্যে' আফগানিস্তানে ফেরার পরিকল্পনা করছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প
শুক্রবার সন্ধ্যায় ত্রিপুরার সিপাহিজালা জেলার পুটিয়ায় সংঘর্ষ হয় বিএসএফ এবং বাংলাদেশি পাচারকারীদের। সেই সময় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর একজন জওয়ান এবং একজন বাংলাদেশি চোরাকারবারী জখম হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। বিএসএফ জানিয়েছে, শুক্রবার ভারতীয় দুষ্কৃতীদের সঙ্গে চোরাচালানের জন্য পুটিয়া হয়ে রাজ্যে অনুপ্রবেশ করার চেষ্টা করছিল বাংলাদেশিরা। সেই সময় কর্তব্যরত বিএসএফ কর্মীরা ২০ থেকে ২৫ জন বাংলাদেশি পাচারকারীর একটি দলকে লক্ষ্য করে। প্রাথমিক ভাবে বিএসএফ তাঁদের সতর্ক করে সীমান্ত পার করতে বারণ করে। এরই মাঝে দু'বার জওয়ানদের ওপর হামলা চালায় দুষ্কৃতীরা। এরপরই এক রাউন্ড রবার বুলেট ছোড়ে বিএসএফ। তাতে জখম হয় এক পাচারকারী। (আরও পড়ুন: নাহিদদের দলের আত্মপ্রকাশের মঞ্চের স্ক্রিনে হঠাৎ ফুটে উঠল হাসিনার ছবি, তারপর…)
আরও পড়ুন: ট্যাংরার রেশ কাটতে না কাটতেই পর্ণশ্রী! উদ্ধার ২২ বছরের মেয়ে ও বাবার মৃতদেহ
পরে বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যম দাবি করে, সেই পাচারকারীর মৃত্যু হয়েছে বিএসএফের রবার বুলেটেই। মৃতের নাম মহম্মদ আল-আমীন, বয়স ৩২ বছর। তার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার পুটিয়া গ্রামে। ভারতীয় ভূখণ্ডে অনুপ্রবেশের পরই বিএসএফ তাকে গুলি করেছিল। কালের কণ্ঠের রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, সেই ব্যক্তির দেহ বিএসএফ ক্যাম্পে রাখা আছে। (আরও পড়ুন: অ্যাশলের পাশাপাশি শিভন! আরও একবার বাবা হলেন ইলন? কটা সন্তান মাস্কের?)
আরও পডুন: USA-কে ধন্যবাদের বন্যায় ভাসালেন জেলেনস্কি, ঝামেলায় কি 'হার' হল ট্রাম্পের?
সম্প্রতি নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত বিজিবি, বিএসএফ শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকে নাকি উভয় পক্ষই সীমান্তের ১০০টি স্থান চিহ্নিত করেছে যেখানে সীমান্ত দেওয়া হবে। এমনই দাবি করা হয়েছে টেলিগ্রাফের রিপোর্টে। এদিকে দুই দেশই যোগাযোগ স্থাপনের জন্যে একটি নির্দিষ্ট মাধ্যম স্থির কথার বিষয়ে সহমত হয়েছে। সীমান্তে উত্তেজনার মাঝে 'আস্থা' বৃদ্ধির বার্তা দেওয়া হয়েছে দুই পক্ষেই। (আরও পড়ুন: 'খারাপ লাগছে', রাষ্ট্রপতির সাক্ষাৎ না পাওয়ায় 'ক্ষুব্ধ' আরজি কর নির্যাততিতার বাবা)
আরও পড়ুন: শিয়ালদা থেকে এবার উত্তরবঙ্গে যাবে নতুন ট্রেন, বড় ঘোষণা রেলের, একনজরে সময়সূচি
এর আগে সম্প্রতি মালদার সুকদেবপুরে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে ছড়িয়েছিল। গত ১৮ জানুয়ারি মালদায় ভারত-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমান্তে বাংলাদেশিরা চড়াও হয়েছিল বলে অভিযোগ। সেই সময় বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের রুখে দিয়েছিল বিএসএফ। সুকদেবপুরবাসীদের অভিযোগ, ইউনুস জমানাতেই বাংলাদেশিরা ভারতীয় ভূখণ্ডে এসে লুটপাট চালাতে শুরু করেছে। তেহট্ট এলাকাতেও কৃষিজমিতে লুটপাটের অভিযোগ উঠেছিল বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে। অপরদিকে উত্তর দিনাজপুরে অনপ্রেশের ঘটনা ঘটেছে বেশ কয়েকবার। এদিকে উত্তরে জলপাইগুড়িতেও সীমান্তে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে বিএসএফ এবং বিজিবির মধ্যে। সীমান্ত নিয়ে নদিয়াতেও উত্তেজনা ছড়িয়েছিল। (আরও পড়ুন: ঝামেলার জেরে ৩ দিন বন্ধ পরিষেবা, শনিতে কি গড়াবে ৪৬ নং রুটের বাসের চাকা?)
আরও পড়ুন: কলকাতায় সোনার দাম কমার হ্যাটট্রিক! ৩ দিনে কত নামল হলুদ ধাতুর রেট?
উল্লেখ্য, বাংলাদেশিদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিএসএফ কাঁটাতারের বেড়া দিতে গেলে তাতে আপত্তি জানাচ্ছে বিজিবি। এদিকে অনুপ্রবেশকারী বা পাচারকারীদের গুলি করলে তাতেও আপত্তি ওপারের শাসক গোষ্ঠীর। প্রসঙ্গত, বিগত বেশ কয়েকদিন ধরেই সীমান্তে কাঁটাতার দেওয়া নিয়ে সংঘাত দেখা গিয়েছে বিএসএফ এবং বিজিবির মধ্যে। এই আবহে মালদা সহ একধিক জায়গায় ভারতীয় ভূখণ্ডের কাঁটাতার দিতে গিয়ে বাধার মুখে পড়ছে বিএসএফ। এর জেরে সীমান্তের বহু জায়গায় ছড়িয়েছে উত্তেজনা। এই ইস্যুতে বাংলাদেশের দাবি, ১৯৭৫ সালে যে আন্তর্জাতিক সীমান্ত চুকি দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়েছিল, তা অনুযায়ী, সীমান্তের জিরো পয়েন্ট থেকে ১৫০ গজ ভিতরে 'প্রতিরক্ষা কাঠামো' তৈরি করা যাবে। এদিকে ২০১০ সালে অবশ্য বাংলাদেশ ভারতকে লিখিত আকারে অনুমতি দিয়েছিল যে সীমান্তে ১৫০ গজের ভিতরেও প্রয়োজনে কাঁটাতারের বেড়া দিতে পারবে ভারত। এই কথা নিজে স্বীকার করেন বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গির আলম চৌধুরী। এখন বাংলাদেশের গদিতে 'মুখ' পরিবর্তনের পরে তাদের অভ্যন্তরীণ সমীকরণ যাই হয়ে থাকুক না কেন, আগের সরকারের স্বাক্ষরিত দ্বিপাক্ষিক আন্তর্জাতিক চুক্তি মানতে বাধ্য তারা।