বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমস্যা কি আরও বাড়ল? এই প্রশ্ন উঠছেই। কারণ, বৃহস্পতিবারই তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে বাংলাদেশের একটি আদালত। সেইসঙ্গে, আরও অন্তত ৫০ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে বলে দাবি সূত্রের।
বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের চিফ প্রসিকিউটর মহম্মদ তাজুল ইসলাম এই প্রসঙ্গে এদিন বলেন, 'আদালত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করার এবং তাঁকে আগামী ১৮ নভেম্বর আদালতে পেশ করার নির্দেশ দিয়েছে।'
বাংলাদেশি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে দাবি করা হয়েছে, শেষ যে ১৫ বছর শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসাবে বাংলাদেশের সরকার ও প্রশাসনের নেতৃত্বে ছিলেন, সেই ১৫ বছরে অসংখ্যবার মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে।
এমনকী, পূর্বতন হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে গণ-গ্রেফতারি চালানো এবং তৎকালীন শাসকদলের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিনা বিচার খুন করারও অভিযোগ উঠেছে। এই প্রসঙ্গে ইসলাম বলেন, 'গত জুলাই থেকে অগাস্ট মাস পর্যন্ত যাঁরা গণহত্যা চালিয়েছিলেন, যাঁরা গণতন্ত্রকে খুন করেছিলেন, তাঁদের সকলের নেতৃত্বে ছিলেন শেখ হাসিনা।'
বৃহস্পতিবার শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আদালত গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করায় ইসলাম একে একটি 'অবিস্মরণীয় দিন' বলেও অবিহিত করেছেন।
প্রসঙ্গত, গত ৫ অগাস্ট বাংলাদেশ ছেড়ে পালানোর পর থেকে ৭৭ বছরের শেখ হাসিনাকে আর একবারও প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। বস্তুত, তিনি বর্তমানে কোথায় রয়েছেন, তা নিয়েও নানা জল্পনা শুরু হয়েছে।
উল্লেখ্য, ছাত্র আন্দোলন ও কালক্রমে শুরু হওয়া গণ-আন্দোলনের জেরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী পদে ইস্তফা দিতে বাধ্য হন শেখ হাসিনা। গত ৫ অগাস্ট তড়িঘড়ি নিজের বোনকে সঙ্গে নিয়ে নয়া দিল্লি চলে আসেন তিনি।
কিন্তু, তারপর থেকে হাসিনা কোথায় রয়েছেন, সেই বিষয়ে সরকারি স্তরে কোনও খবর সামনে আসেনি। সম্প্রতি বাংলাদেশের একাধিক সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হয়, হাসিনা নাকি আরব দেশে রয়েছেন।
কিন্তু, হাসিনার ছেলে নিজেই সেই দাবি ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দেন। তিনি জানিয়েছেন, তাঁর মা নাকি এখনও পর্যন্ত ভারতেই রয়েছেন। কিন্তু, ভারত সরকার এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করেনি।
এদিকে, হাসিনার এই 'ভারতে থাকা' নিয়ে পড়শি বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই একাধিকবার অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। যদিও ভারত তার প্রেক্ষিতে সরকারিভাবে কোনও সাড়া দেয়নি।
হাসিনাকে বিপাকে ফেলতে ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার তাঁর কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিল করেছে। ফলত, প্রশ্ন উঠেছে, এই অবস্থায় হাসিনা যদি ভারতেই থাকেন, তাহলে তিনি কী পরিচয়ে এখানে থাকছেন? নয়া দিল্লি এরও কোনও জবাব দেয়নি।
তথ্য বলছে, ভারত ও বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক চুক্তি অনুসারে, বর্তমান প্রেক্ষাপটে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কোনও ফৌজদারি মামলা রুজু হলে ঢাকার তরফে নয়া দিল্লির কাছে হাসিনাকে তাদের হাতে তুলে দেওয়ার দাবি জানানো হতে পারে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে স্বদেশে ফিরে আইনি কার্যাবলী ও ফৌজদারি শুনানির মুখে পড়তে হবে।
তবে, এখানেও কিছু শর্ত রয়েছে। তথ্যাভিজ্ঞ মহলের দাবি, বাংলাদেশ বললেই যে ভারত সরকার শেখ হাসিনাকে প্রত্যার্পণ করতে বাধ্য থাকবে, ব্যাপারটা মোটেও তেমন নয়।
যদি দেখা যায়, এই প্রত্যার্পণের আবেদনের কোনও 'রাজনৈতিক চরিত্র' রয়েছে, তাহলে ভারত সেই আবেদন বাতিলও করতে পারে।