বিশ্বের এমন কিছু স্থান আছে যার সঙ্গে জড়িয়ে আছে হাড়হিম করা রহস্যকাহিনী। কিছু স্থান প্রকৃতির বিস্ময় আবার কিছু মানুষের তৈরি কিন্তু ব্যাখ্যাতীত। বিজ্ঞানী, ইতিহাসবিদ, এমনকি সাধারণ পর্যটকরাও এসব রহস্যের সমাধান করতে ব্যর্থ হয়েছেন। আসুন, জেনে নেওয়া যাক এমনই কয়েকটি রহস্যময় স্থান সম্পর্কে।
১. ক্রুকড ফরেস্ট, পোল্যান্ড: পোল্যান্ডের গ্রিফিনো শহরের কাছে প্রায় ৪০০টি পাইন গাছ অস্বাভাবিকভাবে বাঁকা হয়ে বেড়ে উঠেছে। কেন এমন হয়েছে তার সঠিক কারণ জানা নেই। কেউ বলেন, এটি মাধ্যাকর্ষণের শক্তির বিরল প্রভাব। আবার কেউ কেউ বলেন, এটি কৃষিকাজের ব্যর্থ একটি কৌশল। অনেকে দাবি করেন, যুদ্ধকালীন ট্যাংকের কারণে গাছগুলো এমন আকৃতি পেয়েছে।
২. বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল, আটলান্টিক মহাসাগর: মায়ামি, বারমুডা ও পুয়ের্তো রিকোর মাঝের এই অঞ্চলে বহু জাহাজ ও বিমান রহস্যজনকভাবে হারিয়ে গিয়েছে। কম্পাস বিকল হয়ে যাওয়া, রেডিও সংকেত হারিয়ে যাওয়ার মতো ঘটনাগুলোর জন্য কিছু বিজ্ঞানীরা প্রতিকূল আবহাওয়াকে দায়ী মনে করলেও, অনেকেই মনে করেন এখানে কিছু অজানা শক্তির প্রভাব আছে।
৩. নরকের দরজা, তুর্কমেনিস্তান: কারাকুম মরুভূমির মধ্যে অবস্থিত ‘নরকের দরজা’ নামে খ্যাত এই বিশাল গর্তটি প্রায় ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে জ্বলছে। ১৯৭০-এর দশকে কিছু সোভিয়েত ইঞ্জিনিয়াররা দুর্ঘটনাবশত এটি সৃষ্টি করেন এবং বিষাক্ত গ্যাসের বিস্তার প্রতিরোধ করতে আগুন ধরিয়ে দেন। ধারণা করা হয়েছিল, আগুন কয়েকদিনের মধ্যে নিভে যাবে কিন্তু তা আজও জ্বলছে।
৪. মোয়াই মূর্তি,ইস্টার দ্বীপ,চিলি: এই বিশাল পাথরের মূর্তিগুলি কীভাবে তৈরি ও স্থানান্তরিত হয়েছিল, তা আজও রহস্য। কিছু মূর্তির ওজন ৮০ টনেরও বেশি, অথচ এগুলো চাকা বা পশুর সাহায্য ছাড়াই সরানো হয়েছিল। মূর্তিগুলোতে মাটির নীচে চাপা পড়ে থাকা দেহও রয়েছে। গবেষকদের ধারণা, দড়ির সাহায্যে ‘হেঁটে’ নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
আরও পড়ুন - Climate Crisis Affects Crocodiles: জলবায়ুর পরিবর্তনে বদলাচ্ছে কুমিরদেরও আচরণ!
৫. নাজকা লাইনস, পেরু: পেরুর মরুভূমিতে ২০০০ বছর আগে তৈরি বিশাল আকৃতির সরলরেখার মতো চিত্রগুলি শুধু আকাশ থেকে ভালোভাবে দেখা যায়। কীভাবে একটি প্রাচীন সভ্যতা এত নির্ভুলভাবে নকশা তৈরি করেছিল তা কল্পনার অতীত। এগুলির কোনটি প্রাণীর মতো আকৃতির, অন্যগুলি সর্পিলের মতো। এগুলি দেবতাদের উদ্দেশ্যে তৈরি নাকি ভিনগ্রহীদের কাজ, তা আজও জানা যায়নি।
৬. ডেথ ভ্যালির পালতোলা পাথর, যুক্তরাষ্ট্র: কল্পনা করুন মরুভূমির মধ্য দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় একটি পাথর, যার পিছনে একটি দীর্ঘ পথ রয়েছে। মনে হচ্ছে যেন এটি বালির উপর দিয়ে নিজেকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। ম- কেবল পাথরটি সেখানে বসে আছে। বছরের পর বছর ধরে ক্যালিফোর্নিয়ার ডেথ ভ্যালির এই পালতোলা পাথর বিজ্ঞানীদের বিভ্রান্ত করেছে। অনেকের ধারণা, বৃষ্টি, বরফ ও বাতাসের সংমিশ্রণে পাথরগুলি ধীরে ধীরে সরছে।
৭. উইনচেস্টার মিস্ট্রি হাউস, যুক্তরাষ্ট্র: ভূত বলে যদি কিছু থেকে থাকে তবে এই বিশাল প্রাসাদটি সেই ভূতেদের কারখানা। রাইফেল ম্যাগনেটের বিধবা স্ত্রী সারা উইনচেস্টারের তৈরি এই বাড়িটির সিঁড়ি এক গোলকধাঁধা। দেওয়ালে খোলা দরজা এবং মেঝেতে জানালা। কিংবদন্তি অনুসারে, তিনি বিশ্বাস করতেন উইনচেস্টার দ্বারা নিহতদের আত্মা তাঁকে তাড়িয়ে বেড়াত। তাদের বিভ্রান্ত করার জন্যই এমন মাথা ঘুরিয়ে দেওয়া স্থাপত্য।
৮. হোইয়া বাসিউ বন, রোমানিয়া: এই বনকে ‘রোমানিয়ার বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল’ বলা হয়। এখানে প্রবেশকারীরা এক অদ্ভুত আলোর দেখা পান, সময়ের জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন এবং কখনো কখনো শারীরিক অস্বস্তি অনুভব করেন। ঘন বনের মাঝখানে একটি গোলাকার জায়গা রয়েছে যেখানে কিছুই জন্মায় না। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এখানের মাটি অস্বাভাবিক তবে স্থানীয়রা বিশ্বাস করেন যে এটি আরও ভয়ঙ্কর কিছু।
আরও পড়ুন - মাছ ধরতে গিয়ে ভ্রুক্ষেপ নেই! অবহেলার কারণে মৃত অগুনতি বিরল কচ্ছপ
এই স্থানগুলো প্রকৃতির খেয়াল, মানুষের হারিয়ে যাওয়া ইতিহাস নাকি আমাদের জ্ঞানের বাইরের কোন বিভীষিকা, সে প্রশ্নের উত্তর এখনও অজানা।