বলিউড অভিনেতা মনোজ কুমার আর নেই। এতক্ষণে এখবর জেনে গিয়েছেন অনেকেই। কিংবদন্তি অভিনেতার মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ বলিউড। শোক প্রকাশ করেছেন অক্ষয় কুমার, করণ জোহররা। কিংবদন্তির মৃত্যুতে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন, শোক প্রকাশ করেছেন বলিউড বাদশা শাহরুখও। তবে কি জানেন একদিন এই কিং খানের বিরুদ্ধেই ১০০ কোটির মানহানির মামলা করেছিলেন মনোজ কুমার। আজ অভিনেতার মৃত্যুতে আলোচনায় উঠে আসছে পুরনো সেই কথাও।
কিন্তু কী ঘটেছিল? কেন শাহরুখের বিরুদ্ধের মানহানির মামলা করেছিলেন মনোজ কুমার?
সেটা ছিল ২০০৭ সাল। সেবছরই মুক্তি পায় ফারহা খানের 'ওম শান্তি ওম'। নায়ক-নায়িকা শাহরুখ খান-দীপিকা পাড়ুকোন। দীপিকার ডেবিউ ছিল সেটি। ছবি মুক্তির পরই একটি দৃশ্য নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়। মনোজ কুমারের অভিযোগ ছিল, ছবির একটি দৃশ্যে তাঁকে 'অপমান' করা হয়েছে।
উক্ত দৃশ্যে শাহরুখের চরিত্র ওম প্রকাশ মাখিজাকে প্রবীণ অভিনেতার পাস চুরি করে একটি সিনেমার প্রিমিয়ারে ঢুকে পড়তে দেখা যায়। তবে পুলিশ তাঁকে চিনতে পারেনি। মনোজ কুমারের অভিযোগ ছিল ওই দৃশ্যে শাহরুখ তাঁকে নকল করেছেন, তাঁকে ব্যঙ্গ করেছেন। বিষয়টি মোটেও ভালোভাবে নিতে পারেননি বর্ষীয়ান অভিনেতা। আর তখনই ছবির নির্মাতাদের বিরুদ্ধে ১০০ কোটির মানহানির মামলা দায়ের করেন মনোজ কুমার। বর্ষীয়ান, সদ্য প্রয়াত অভিনেতা সেসময় 'ওম শান্তি ওম'-এর নির্মাতাদের ছবিটি থেকে দৃশ্যটি সরিয়ে নিতে বলেন। নির্মাতারা তাঁর সেই দাবিতে মেনে নেন।
মনোজ কুমারের কাছে তাঁর অনুভূতিতে আঘাত করার কারণে ক্ষমা চেয়ে নেন কিং খান শাহরুখ। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, 'আমি সম্পূর্ণ ভুল ছিলাম... যদি তিনি আঘাত পেয়ে থাকেন, আমি ক্ষমা চাইছি। আমি বিকেলে তাঁকে ফোন করেছিলাম, উনি আমাকে প্রথমেই বলেছিলেন, ‘এটা এমনকিছু বড় বিষয় নয়, বাবা।’
কিং খান সাংবাদিক সম্মেলনে আরও বলেন, 'অভিনেতারা প্যারোডি করে...এটা তাঁর একটা কাজ। আমার অতিরিক্ত সাবধান থাকা উচিত ছিল... আমার ওঁকে আগেই ফোন করা উচিত ছিল (এই বিষয়টি তাঁকে জানানো উচিত ছিল)।
এদিকে ২০০৭ সালে, মামলা করার বিষয়ে মনোজ কুমারের আইনজীবী মুকেশ ভাশি এক বিবৃতিতে বলেছিলেন, ‘মনোজ কুমার ছবির একটি নির্দিষ্ট দৃশ্য দেখে ক্ষুব্ধ হন এবং উনিই আমার আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে কোনও আইনি পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব কিনা? তবে, আমি নিজে ছবিটি দেখিনি। তাই, এটি দেখার পরেই আমি ওকে পরামর্শ দিতে পারব।’ আইনজীবী আরও বলেন, ‘ভারতীয় দর্শক মনোজ কুমারকে একজন আইকনে পরিণত করেছেন... সেই আইকনকে আহত করা হয়েছে, উপহাস করা হয়েছে..... আইনি পদক্ষেপের চেয়ে নৈতিক পদক্ষেপ বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’
এদিকে ২০০৭ সালে সেই ঝামেলা শেষ হয়েও হয়নি। ২০১৩ সালে ওম শান্তি ওম জাপানে ওই বিতর্কিত দৃশ্যটি সহ আবারও মুক্তি পায়। যে দৃশ্য নিয়ে মনোজ কুমারের আপত্তি ছিল। এরপর বর্ষীয়ান অভিনেতা আইনি সহায়তা চেয়ে শাহরুখ এবং ইরোস ইন্টারন্যাশনালের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। তিনি ১০০ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ দাবি করেন।
অভিনেতার আইনজীবী জানান, ‘শাহরুখ খান এর আগে মনোজ কুমারকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন কিন্তু জাপানে আবারও এই ভুলটিরই পুনরাবৃত্তি হয়েছে... শাহরুখ ব্যক্তিগত ক্ষমা চাননি... তিনি আসলে মীমাংসা করতেই চান না।’
এদিকে সেসময় মিঃ কুমারও তাঁর হতাশা গোপন করেননি। সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘ছবিটি জাপানে ওই দৃশ্যগুলি না মুছেই মুক্তি পেয়েছs। আমি দুবার ওঁদের ক্ষমা করে দিয়েছিলাম কিন্তু এবার নয়। ওঁরা আমাকে অসম্মান করছেন। ওঁরা আদালত অবমাননারও সম্মুখীন হবেন কারণ ২০০৮ সালে আদালত নির্মাতাদের চিরতরে ওই দৃশ্যের সমস্ত প্রিন্ট এবং সম্প্রচার সামগ্রী থেকে ওই দৃশ্যগুলি মুছে ফেলতে বলেছিল।’
এরপর এবিষয়ে দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর মনোজ কুমার মামলা তুলে নেন কারণ তাঁর মনে হয়েছিল আইনি প্রক্রিয়া শাহরুখ এবং ফারাহ খানের মধ্যে দায়িত্ববোধ জাগাতে ব্যর্থ হয়েছে।