শ্যাম বেনেগাল (১৯৩৯-২০২৪)
ভারতীয় সিনেমার এক দিকপাল ব্যক্তিত্ব শ্যাম বেনেগাল ২০২৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর ৮৫ বছর বয়সে পরলোক গমন করেছেন। তিনি ভারতীয় চলচ্চিত্রে একটি যুগ সৃষ্টি করেছেন, বিশেষ করে সমান্তরাল ধারার সিনেমার ক্ষেত্রে। তাঁর চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তিনি ভারতীয় সমাজের জটিলতা, বাস্তবতা এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের গভীর চিত্র তুলে ধরেছিলেন।
১৯৩৯ সালের ১৪ ডিসেম্বর হায়দরাবাদে জন্ম নেওয়া শ্যাম বেনেগাল চলচ্চিত্রের প্রতি তার ভালোবাসা থেকে একটি অসাধারণ যাত্রা শুরু করেন। তিনি প্রথমে টেলিভিশন এবং তথ্যচিত্র নির্মাণে কাজ শুরু করেন, এরপর ১৯৭০-এর দশকে ফিচার ফিল্ম নির্মাণে প্রবেশ করেন। তার প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য ছবি ‘অঙ্কুর’ (১৯৭৪) এক নতুন ধারার সিনেমার সূচনা করে, যেখানে মূলধারা বোলিউডের বানানো চলচ্চিত্রের তুলনায় বাস্তবধর্মী এবং সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি উঠে আসে।
বেনেগালের কিছু অতি জনপ্রিয় চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে ‘নিশান্ত’ (১৯৭৫), ‘মন্থন’ (১৯৭৬), ‘ভূমিকা’ (১৯৭৭), এবং ‘কালিযুগ’ (১৯৮১)। তার এসব কাজের প্রতিটিতেই দেখা যায়, তিনি সমাজের নানা স্তরের মানুষ, তাদের সম্পর্ক এবং দ্বন্দ্বগুলোকে খুবই নিখুঁতভাবে চিত্রিত করেছেন। তিনি সমাজের অবহেলিত মানুষদের কাহিনির মাধ্যমে একটি নতুন দৃষ্টি দিয়েছিলেন ভারতীয় সিনেমায়।
তাঁর কাজের জন্য বেনেগাল বহু জাতীয় পুরস্কার লাভ করেছেন, যার মধ্যে রয়েছে ভারতের তৃতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান পদ্মভূষণ (২০০৫)। তবে তাঁর আসল মূল্যায়ন শুধু পুরস্কারেই সীমাবদ্ধ নয়। তিনি একজন শিক্ষাগুরুর মতো কাজ করেছেন, বহু নতুন চলচ্চিত্র নির্মাতাদের প্রেরণা দিয়েছেন এবং ভারতীয় সিনেমায় স্বাধীন এবং অর্থপূর্ণ চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য আন্দোলন সৃষ্টি করেছেন।
বেনেগাল টেলিভিশন জগতেও অবদান রেখেছিলেন, যার মধ্যে অন্যতম হল ‘ভারত এক খোজ’ (১৯৮৮), যা জওহরলাল নেহরুর ‘ডিসকভারি অফ ইন্ডিয়া’ বইয়ের ওপর ভিত্তি করে নির্মিত। এই সিরিজটি দর্শকদের মাঝে শিক্ষা এবং বিনোদন মিলিয়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল।
শুভেচ্ছা ও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হবে শ্যাম বেনেগালের কৃতিত্বকে, যিনি আমাদের চলচ্চিত্রের ভাষাকে, চিন্তাভাবনাকে এবং ভাবনাকে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করেছেন। তিনি তার পরিবার, সহকর্মী এবং অসংখ্য অনুরাগীদের কাছে চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
তিনি আর নেই, তবে তার সৃষ্টির মধ্যে তিনি চিরকাল বেঁচে থাকবেন, এবং ভবিষ্যৎ চলচ্চিত্র নির্মাতাদের জন্য তিনি সর্বদা একটি দিকনির্দেশক বাতিঘর হয়ে থাকবেন। থাকবেন এক শিক্ষাগুরু হিসাবেই।