টলিউডের রূপটান শিল্পী প্রস্থেটিক মেকআপ করবে! ভাবতেও পারতেন না টলিউডের পরিচালকরা। কিন্তু অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন ‘ম্যাজিকশিয়ান’ সোমনাথ কুণ্ডু। এখন বাংলা ছবিতে প্রস্থেটিক মেকআপের দরকার হলে আর বলিউডের দিকে তাকাতে হয় না কারণ আমাদের একজন সোমনাথ কুণ্ডু আছেন। আরও পড়ুন-জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অরিজিতের, সেরা বাংলা ছবি কৌশিকের কাবেরী অন্তর্ধান! দক্ষিণের জয়জয়কার
প্রথাগত শিক্ষা নেই, বিভিন্ন বই আর পরবর্তীকালে ইউটিউবে ভরসা করেই অনেক কম খরচে চমকে দেওয়ার মতো প্রস্থেটিক মেকআপ করেন সোমনাথ, এবার জাতীয় মঞ্চে তাঁর জয়জয়কার। জিতু কমলকে সত্যজিৎ রায়ে-র রূপ দিয়ে ৭০তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের মঞ্চে সেরা মেকআপ আর্টিস্টের পুরস্কার জিতলেন সোমনাথ কুণ্ডু। আরজি কর কাণ্ড ঘিরে টলিউডেও মন খারাপের বন্যা, তার মধ্য়েই একটু হাসি ফোটালেন সোমনাথ।
হিন্দুস্তান টাইমস বাংলার তরফে যোগাযোগ করা হয়েছিল শিল্পীর সঙ্গে। এমন দিনেও কাজে ব্যস্ত তিনি। লুক সেটের ফাঁকেই ফোন ধরলেন। অভিনন্দন জানাতেই পালটা ধন্যবাদ। বললেন, ‘জানেন শুরুতে বিশ্বাস হয়নি। তবে আমার প্রযোজক ফিরদৌস উলদা আর সৃজিতদা যখন ফোন করলেন, বুঝলাম খবরটা সত্যি। আরও দায়িত্ব বেড়ে গেল কাজের প্রতি। এতদিন একটু-আধটু ফাঁকি দিতাম, সেইটুকুও আর দেওয়া যাবে না'।
কেরিয়ারের প্রথম জাতীয় পুরস্কারষ রূপটান শিল্পী জানালেন, ‘এই পুরস্কার আমি আমার বাবাকে উৎসর্গ করব, উনি আজ আমাদের মধ্যে নেই। ওঁনার জন্যই আমার ইন্ডাস্ট্রিতে আসা, কাজ করা। উনি বলেছিলেন, মেকআপ করলে তুমি নাম করবে। বাবাকে এবং আরজি করের সদ্য প্রয়াতা চিকিৎসক, যাঁকে আমরা নির্ভয়া বলছি তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করে তাঁকে এই পুরস্কারটা আমি উৎসর্গ করলাম’।
ফোনের পর ফোন, মেসেজর পর মেসেজ- অভিনন্দন বার্তায় ভাসছেন সোমনাথ কুণ্ডু। জিতু কমলকে সত্যজিৎ রায় হিসাবে তুলে ধরা, কতটা চ্যালেঞ্জিং ছিল? শিল্পী বললেন- ‘এটা আমার রুজিরুটি। মেকআপ করাটা আমার কাজ। কিন্তু মেকআপের পর জিতু যেভাবে অভিনয়টা করেছে, মেকআপটা করার পর আমার মনে হয়নি সত্যজিৎ রায়কে বানানো কঠিন। আজকে আমার এই অ্যাওয়ার্ডটা যে পাচ্ছি তার অনেকটা ক্রেডিট জিতুর, কারণ ওর অভিনয়ের জন্যই আমার মেকআপটা সার্থক হয়েছে। অবশ্যই পরিচালক অনীক দত্তকেও আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই। ওঁনার সঙ্গেও অপরাজিত আমার প্রথম কাজ'।
পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের একাধিক ছবিতে চরিত্রের চেহারার পরিকল্পনা সোমনাথ। প্রসেনজিৎ ‘নেতাজি’ (ছবি-গুমনামী) হয়ে উঠেছেন সোমনাথের হাতের জাদুতে। ভিঞ্চি দা-র নেপথ্যেও রয়েছেন সোমনাথ। সৃজিত মুখোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ জানাতে ভুললেন না সোমনাথ। বললেন, ‘সৃজিতদাই আমাকে প্রথম প্রস্থেটিক মেকআপের সুযোগ দিয়েছিলেন, ওঁনার কাছেও আমি ঋণী’।
৪৮ বছর বয়সে এসে জাতীয় স্তরে স্বীকৃতি। কোনও আফসোস নেই সোমনাথ কুণ্ডুর। বরং সামনের দিকে তাকাতে চান তিনি। বললেন, ‘আশা করছি আগামিতে আরও ভালো কাজ করব। লোকে সুযোগ দিলে নিশ্চয় ভালো কাজ হবে, আনন্দ করে কাজটা করতে চাই’।