‘ভারত ১৭ বছর পর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতল। খরা শেষ হলো। ভাবুন তো, শেষ আধ ঘণ্টায় হার্দিক পান্ডিয়া যা করল!’ ভারতের প্রাক্তন ক্রিকেটার ও প্রাক্তন প্রধান কোচ রবি শাস্ত্রীর আবেগময় এই কথাগুলো এখনও ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীদের কানে বেজে ওঠে। দক্ষিণ আফ্রিকাকে রোমাঞ্চকর ফাইনালে হারিয়ে ভারত ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা জিতেছিল।
ভারতের তারকা অলরাউন্ডার হার্দিক পান্ডিয়া যিনি ভারতের ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের অন্যতম স্থপতি ছিলেন, তিনি আইসিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে উত্তেজনাপূর্ণ ফাইনালের স্মৃতিচারণ করেছেন। এবং কীভাবে তিনি চাপের মুহূর্তেও শান্ত থাকতেন, তা ব্যাখ্যা করেন।
এনরিখ ক্লাসেনকে আউট করার কৌশল নিয়েও বিস্তারিত জানিয়েছিলেন হার্দিক পান্ডিয়া-
হার্দিক পান্ডিয়া বললেন, ‘খুব বেশি কথা হয়নি। রোহিত আর আমি বহু বছর একসঙ্গে খেলেছি। সে আমার চরিত্র, আমার ব্যক্তিত্ব এবং ক্রিকেট সম্পর্কে আমার উপলব্ধি সম্পর্কে জানে। বল করার ঠিক আগে আমি ওকে বললাম যে ক্লাসেনের জন্য অফস্টাম্পের বাইরে ওয়াইড বল করব। আমি বুঝতে পারছিলাম, ক্লাসেন নিশ্চয়ই ভাবছে যে আমি ওর পায়ের কাছেই বল করব। ওর স্টান্সটা একটু লেগসাইডের দিকে ভারি ছিল, তাই অনুমান করেছিলাম যে ও আমাকে ওখানেই মারার চেষ্টা করবে।’
ক্লাসেনের শট দেখে একটা সময়ে অবাক হয়ে যান হার্দিক-
হার্দিক পান্ডিয়া আরও বলেন, ‘আমি রানআপ নেওয়ার সময় ঠিক শেষ মুহূর্তে ওকে দেখে বলার চেষ্টা করছিলাম, ‘আমি স্লোয়ার বল করব’। কিন্তু স্লোয়ার বলের জন্য আমি ফিল্ড সাজাইনি। তাই আমাকে ওকে বোকা বানাতে হত, খেলার এক ধাপ এগিয়ে থাকতে হত, যাতে ও অনুমান না করতে পারে আমি কী করতে চলেছি। ক্লাসেন যেভাবে শট খেলছিল, সেটা অবাক করার মতো ছিল। এই মুহূর্তটা আমাদের জন্য দরজা খুলে দিয়েছিল।’
চাপের মুহূর্তে খেলা নিয়ে হার্দিক বলেন-
হার্দিক পান্ডিয়া বললেন, ‘আমি বরাবরই চাপের মুহূর্তে ভালো খেলতে পছন্দ করি, এই পরিস্থিতিগুলো আমাকে আরও ভালো করে তোলে। আমি সব সময় কল্পনা করতাম, বিশ্বকাপ ফাইনালে শেষ ওভার বল করব বা জয়সূচক রানটি করব।’
ক্লাসেনকে নিয়ে হার্দিকের পরিকল্পনা কী ছিল-
হার্দিক পান্ডিয়া বললেন, ‘বার্বাডোজে তখন ড্রেসিংরুমের দিকে খুব বাতাস বইছিল। ক্লাসেন যদি আমাকে পুল করত, তবে বাতাসের বিপরীতে শট খেলতে হত, যার ফলে মিসটাইমড শট খেলার সম্ভাবনা বেড়ে যেত। আমি মূলত ইয়র্কার দিতেই পারতাম, কিন্তু ইচ্ছাকৃতভাবে অফস্টাম্পের বাইরে বল করেছি, যাতে ওকে নিজের শক্তির জায়গার বাইরে খেলতে বাধ্য করা যায়। এটা সম্পূর্ণরূপে পরিস্থিতির প্রতি সচেতনতা ও আমাদের শক্তির সঠিক বিশ্লেষণ ছিল। এই কারণেই আমরা ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পনাগুলো কার্যকর করতে পেরেছিলাম।’
সূর্যকুমার যাদবের প্রশংসা করেন হার্দিক-
ডেভিড মিলারকে আউট করা নিয়ে হার্দিক পান্ডিয়া বলেন, ‘ম্যাচের পর রোহিতের সঙ্গেও এ নিয়ে কথা হয়। যখন বলটা আকাশে উঠল, প্রথমে মনে হচ্ছিল এটা ৩০ গজ বৃত্তের মধ্যেই পড়বে বা ফিল্ডারকে দৌড়ে আসতে হবে। কিন্তু হঠাৎ দেখি, বাতাস বলটাকে আরও দূরে ঠেলে দিচ্ছে, বল থামছেই না! আর সূর্য (সুর্যকুমার যাদব) ওই মুহূর্তে যা করল—ওর উপস্থিত বুদ্ধি আর শান্ত স্বভাব ছিল এক কথায় অবিশ্বাস্য। আমরা দল হিসেবে জিতেছি, কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে এত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারা—এটা স্বপ্নের মতো লাগছে। সত্যিই স্বপ্ন বাস্তবে পরিণত হল।’
শেষে হার্দিক পান্ডিয়া বলেন, ‘মনে হচ্ছিল, যেন কাঁধ থেকে বিশাল একটা বোঝা নেমে গেল। গত ছয়-সাত-আট মাসের চাপ যেন হঠাৎ করেই দূর হয়ে গেল। আমি সত্যিই গর্বিত, যেভাবে আমি নিজেকে শক্ত রেখেছিলাম। হয়তো বাইরে থেকে খুব বেশি আবেগ দেখাইনি, কিন্তু আমার ভিতরের সব অনুভূতি ওই মুহূর্তে বেরিয়ে এসেছিল। এতদিনের চাপে আমি দমবন্ধ হয়ে যাচ্ছিলাম, আর তখন মনে হল, হ্যাঁ, অবশেষে আমি এটা আমার দেশের জন্য করে দেখাতে পেরেছি।’