আস্ত একটি জঙ্গল সাফ করে দেওয়া হল, তবে কেটে নয় পূর্নবাসন করা হল অন্যত্র। দেউচা-পাঁচামি খনি এলাকার জঙ্গলের একটি একটি করে ৯৮৪ গাছ প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। বীরভূমের মহম্মদবাজার ব্লকের চাঁদা মৌজার ওই এলাকা থেকে গাছগুলিকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এক কিলোমিটার দূরে। সেখানেই প্রতিস্থাপন করা হয়েছে গোটা জঙ্গলকে। নতুন সংসারে কার্যত মানিয়ে নিচ্ছে গাছগুলি। বেশ কিছু গাছে গজিয়েছে নতুন পাতা। জেলা প্রশাসনের দাবি, শিল্পের জন্য এত সংখ্যক গাছ না কেটে প্রতিস্থাপন এই প্রথম। তা সফল হয়েছে বলে দাবি করছে জেলা প্রশাসন।
আরও পড়ুন: আদিবাসীদের বলপূর্বক সরানোর অভিযোগ, দেউচা পাঁচামি নিয়ে হলফনামা তলব হাইকোর্টের
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বপ্নের প্রকল্প দেউচা পাঁচামি কয়লাখনি। এরজন্য ইতিমধ্যেই পুর্নবাসনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে জমিদারদের। তবে কয়লাখনির জন্য এই এলাকায় গাছ কাটার বিরোধিতা করে আসছিলেন স্থানীয়দের একাংশ। প্রশাসনের তরফে গাছ না কেটে সেগুলি প্রতিস্থাপনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। সেইমতো গত ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে ওই এলাকার গাছ প্রতিস্থাপন শুরু হয়। প্রথম পর্যায়ে প্রতিস্থাপিত করা হয় ১৮০ টি গাছ। সেই গাছগুলিতে গজিয়ে ওঠে নতুন পাতা। এরপর ধাপেধাপে একই পদ্ধতিতে বাকি গাছগুলির প্রতিস্থাপন হয়। সপ্তাহখানেক আগেই প্রতিস্থাপন সম্পন্ন হয়েছে। দেউচা-পাঁচামির জন্য ভূমি দফতরের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত জেলাশাসক বাবুলাল মাহাতো গোটা প্রক্রিয়ার উপর নজরদারি চালান। তিনি জানান, প্রতিস্থাপন সফল হয়েছে।
তবে এই গোটা প্রক্রিয়া সহজ ছিল। এর জন্য চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয় প্রশাসনকে। আইআইটি খড়গপুরের তত্ত্বাবধানে গাছ প্রতিস্থাপন হয়েছে। রুটবল তৈরি করার পর হাইড্রার সাহায্যে গাছগুলিকে স্থানান্তরিত করতে হয়েছে। বহু বিশেষজ্ঞ এই কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। জানা গিয়েছে, প্রতিস্থাপিত হওয়া গাছের মধ্যে ৭৫৫টি হল মহুয়া। এছাড়াও রয়েছে ১৫০টি অর্জুন, ৭৬টি পিয়াশাল, দু’টি শিরীষ এবং একটি বেলগাছ। গাছগুলিকে যেখানে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে সেখানেও আগে থেকে গর্ত করে মাটি প্রস্তুত করতে হয়েছিল। গাছগুলি একে অপরের থেকে ৮ মিটার দূরত্বে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।
বাবুলাল মাহাতো, গাছের প্রতিস্থাপন সফল হয়েছে। একেবারে বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে হওয়ায় একটা গাছেরও কোনও ক্ষতি হয়নি। গাছগুলির প্রতিস্থাপন পরবর্তী পরিচর্যার জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে। পুরো জঙ্গলকে এভাবে স্থানান্তরিত করা নজিরবিহীন বলেই তিনি জানান।