পাকিস্তানের জাফর এক্সপ্রেস ট্রেনটি যাচ্ছিল বালুচিস্তানের রাজধানী কোয়েটা থেকে খাইবার পাখতুনখোয়ার রাজধানী পেশোয়ারে। মাঝপথে মাঝপথে পেহরো কুনরি ও গাদালদার এলাকার মাঝে একটি টানেলের কাছে ৬ সশস্ত্র বালুচ বিদ্রোহী ট্রেন থামিয়ে দেয়। ট্রেন লক্ষ্য করে গুলি চালিয়ে গোটা ট্রেন রুখে দেয় তারা। ৫০০ যাত্রীবাহী সেই ট্রেন হয়ে যায় মুহূর্তে ছিনতাই। পাক সেনা পাল্টা আকাশপথে স্ট্রাইক করলেও জবাবি হুঁশিয়ারিতে বালুচ গোষ্ঠী জানায়,' আকাশপথে বোমাবাজি এখনই বন্ধ না করলে, ১০০ জন পণবন্দিকে এখনই শেষ করে দেওয়া হবে ১ ঘণ্টায়।'
পাকিস্তানের বুকে এই রুদ্ধশ্বাস হামলা কার্যত সেদেশের নিরাপত্তায় বড় ধাক্কা। জানা যাচ্ছে, ট্রেনে পাক সেনার বহু কর্মী থাকতে পারেন, থাকার সম্ভাবনা রয়েছে আইএসআই-র কর্মকর্তারাও। তাঁদের সমেত এই ট্রেন ছিনতাই হয়েছে। খবর, মহিলা,শিশু ও বালুচদের ট্রেন থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। রমজানকালে পাকিস্তানের বুকে বালুচ লিবারেশন আর্মির এই হামলা গোটা দেশের কাছে নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বড় প্রশ্ন তুলেছে। কারা এই বালুচ লিবারেশন আর্মি? একনজরে ১০ তথ্য।
১) পাকিস্তানে কার্যত দুই দশক ধরে এই বালুচ বিদ্রোহীরা সক্রিয়। সেদেশের সরকারের বিরুদ্ধে এদের লড়াই। বহু সরকারি কর্মী ও প্রতিষ্ঠান এদের টার্গেটে রয়েছে।
২) পাকিস্তানের বালুচিস্তান প্রভিন্সের থেকে উঠে এসেছে এই গোষ্ঠী। পাকিস্তানের দক্ষিণ পশ্চিমে এদের অবস্থান। আফগানিস্তান, ইরানর সীমান্তে এদের বসতি রয়েছে।
৩) মূলত এরা স্বাধীন বালুচিস্তান রাষ্ট্রের দাবিতে সরব। এরা চায় বালুচিস্তানকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে গড়ে তুলতে দেওয়া হোক। এদের দমনে পাকিস্তানি সেনার একাধিক অভিযান এযাভৎকালে হয়েছে।
৪) মূলত, বালুচিস্তানে প্রাকৃতিক সম্পদ ঠাসা। এখানে প্রাকৃতিক গ্যাস ও খণিজের বহু রিজার্ভ রয়েছে। বহু বড় খণি এই এলাকায় রয়েছে। বালুচিস্তানেই রয়েছে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ সোনা ও তামার খণি রেকো দিক। যার তত্ত্বাবধানে রয়েছে বারিক গোল্ড। এলাকার খণিজ ঘিরে পাক সরকার, শোষণ চালাচ্ছে বলে অভিযোগ বালুচ বিদ্রোহীদের।
৫) ২০১৯ সালে এই বালুচিস্তান লিবারেশন আর্মিকে জঙ্গির তকমা দিয়েছে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট। ২০০০ সালে প্রকাশ্যে আসা এই গোষ্ঠীর প্রায় ৬ হাজার সদস্য রয়েছে বলে খবর।
৬) ২০০৬ সালে বালুচ গোষ্ঠীকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে পাকিস্তানও।
৭) পাকিস্তান আর্মি বহু সময় ধরে এই গোষ্ঠীর উপর দমন, নিপীড়ন চালাচ্ছে বলে অভিযোগ। তারপরও এই গোষ্ঠী বালুচিস্তানের অত্যন্ত জনপ্রিয়।
৮) বালুচ জঙ্গিদের হামলার নিশানায় বহু সময়ই এসেছে চিনারা। বালুচিস্তানে শোষণে চিন, পাকিস্তানকে সাহায্য করছে, এই দাবি তুলেই চিনকে নিশানা করেছে বালুচ বিদ্রোহীরা।
৯) গত বছরের অক্টোবরে করাচি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে এক বিস্ফোরণে দুই চিনা নাগরিকের মৃত্যুর সাথে এই দলটির যোগসূত্র ছিল।
১০) বালুচিস্তানে বিভিন্ন নিরাপত্তা ঘাঁটি ও পরিকাঠামো রয়েছে বালুট বিদ্রোহীদের নিশানায়।