বাংলাদেশে কবে নির্বাচন হবে? এই প্রশ্নের উত্তর মেলেনি এখনও। অন্তর্বর্তী সরকারের তরফেও একাধিকজন নানা সময়ে নানা কথা বলেছেন। এসবের মধ্যেই বাংলাদেশে তৈরি হয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি। অনেকেই ভাবছিলেন তাঁরা হয়তো এবার বাংলাদেশে ভোটের দাবি তুলবেন। অথচ একী কাণ্ড! বাংলাদেশের ভোট নিয়ে কী বললেন জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতা?
বাংলা ট্রিবিউনের প্রতিবেদন অনুসারে জানা গিয়েছে, জাতীয় নাগরিক পার্টির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেছেন, 'শেখ হাসিনার বিচার হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনের কথা যেন কেউ মুখেও না নেয়। খুনি হাসিনাকে ফাঁসির মঞ্চে না দেখা পর্যন্ত এই বাংলাদেশে কোনও নির্বাচন হবে না।' জানিয়েছেন বাংলাদেশের জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতা।
সেই সঙ্গেই তিনি জানিয়েছেন, 'আমরা রাজপথে ছিলাম। আমার যে ভাইয়েরা রাজপথে জীবন দিয়েছে, যে মায়েদের চোখ দিয়ে এখনও কান্না ঝরছে, জল পড়ছে আমরা যেন মরার আগে অন্তত খুনি হাসিনার বিচারটা দেখে মরতে পারি। আপনাদের কাছে একটা অনুরোধ। আমরা আমাদের জায়গা থেকে মায়েদের পাশে থাকার সর্বোচ্চটুকু চেষ্টা করব। খুনি হাসিনাকে বাংলাদেশে নিয়ে আসতে হবে, সে বিচারের মঞ্চে দাঁড়াবে। ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়াবে।'
এদিকে বাংলাদেশে কিছুদিন আগে তৈরি হয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি। সেই দলের আত্মপ্রকাশের অনুষ্ঠানে দলের মাথা নাহিদ ইসলাম বলেছিলেন, 'আমরা হাজার বছরের ঐতিহাসিক পরিক্রমায় বঙ্গীয় বদ্বীপের জনগোষ্ঠী হিসেবে এক সমৃদ্ধ ও স্বকীয় সংস্কৃতি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। প্রায় ২০০ বছরের ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে দীর্ঘ লড়াইয়ের পর ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্রের পত্তন ঘটে। তবে শোষণ ও বৈষম্য থেকে এ দেশের গণমানুষের মুক্তি মেলেনি। ফলে দীর্ঘ ২৩ বছরের সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম হয়; কিন্তু স্বাধীনতার পর দীর্ঘসময় ধরে বাংলাদেশের জনগণকে বারবার গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করতে হয়েছে। ১৯৯০ সালে ছাত্র-জনতা বুকের তাজা রক্ত দিয়ে সামরিক স্বৈরাচারকে হটিয়েছে। তথাপি, স্বাধীনতার পাঁচ দশক পেরিয়েও আমরা গণতন্ত্র, সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করে— এমন একটি রাজনৈতিক বন্দোবস্ত তৈরি করতে পারিনি। বরং বিগত ১৫ বছর দেশে একটি নিষ্ঠুর ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থা কায়েম হয়েছিল, যেখানে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ক্ষমতাসীন দলের স্বার্থে বেপরোয়া ব্যবহার করে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করা হয়েছে। বিরোধী মতের কণ্ঠরোধ, গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, সর্বগ্রাসী দুর্নীতি ও অর্থ পাচারকে একটি রাষ্ট্রীয় সংস্কৃতিতে পরিণত করা হয়েছে। জুলাই ২০২৪-এ ছাত্র-জনতা বিপুল আত্মত্যাগের মাধ্যমে এক অভূতপূর্ব অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ দেড় দশক ধরে জেঁকে বসা ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন ঘটিয়েছে; কিন্তু আমাদের স্মরণ রাখতে হবে, হাজারো শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত এই নতুন স্বাধীনতা কেবল একটি সরকার পতন করে আরেকটি সরকার বসানোর জন্যই ঘটেনি। জনগণ বরং রাষ্ট্রের আষ্টেপৃষ্ঠে জেঁকে বসা ফ্যাসিবাদী–ব্যবস্থা বিলোপের মাধ্যমে একটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের আকাঙ্ক্ষা থেকে এই অভ্যুত্থানে সাড়া দিয়েছিল, যেন জনগণের অধিকারভিত্তিক একটি রাষ্ট্র পুনর্গঠিত হয়। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) প্রতিষ্ঠার ঘোষণা করছি। এটি হবে একটি গণতান্ত্রিক, সমতাভিত্তিক ও জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দল।