ভাঁড়ারে টান থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র বাংলাদেশি টাকা বা নোট থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের স্মৃতি মুছে ফেলতে তৎপর হয়েছে মহম্মদ ইউনুস সরকার।তাই আসন্ন ইদে জনসাধারণের মধ্যে নতুন নোট বিনিময় স্থগিত রাখছে বাংলাদেশ ব্যাঙ্ক। অর্থাৎ ইদ উপলক্ষে ১৯ মার্চ থেকে জনসাধারণের মধ্যে যে নতুন টাকা ছাড়ার কথা ছিল তা আর করা হবে না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি বাদ দিয়ে নতুন ডিজাইনের নোট বাজারে আনতে না পারায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ফলে এবার মূল্যবৃদ্ধির বাজারে ইদে টান পড়বে নগদেও। গত ডিসেম্বর মাসে জানা গিয়েছিল নতুন করে নোট ছাপছে বাংলাদেশ ব্যাঙ্ক। আর তাতে নেই বঙ্গবন্ধুর ছবি। বদলে থাকছে ‘জুলাই আন্দোলনে’র ছবি। এভাবেই বাংলাদেশ থেকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস একেবারে নিশ্চিহ্ন করে দিচ্ছে মহম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার।
ইদের আগে নতুন নোটের চাহিদা বিবেচনা করে ঢাকার ৮০টি শাখা থেকে নতুন নোট বিনিময় বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাঙ্ক। আগামী ১৯ মার্চ থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত এসব শাখা থেকে পুরনো ৫,২০ ও ৫০ টাকা বাজারে ছাড়ার কথা বলা হয়। তবে সোমবার ব্যাঙ্কগুলোকে চিঠি দিয়ে আগের ওই সিদ্ধান্ত স্থগিত করার কথা বলা হয়েছে। কেবল ব্যাঙ্ক শাখার মাধ্যমে নোট বিনিময় স্থগিত থাকবে তেমনটা নয়। বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের আধিকারিকরাও এবার নতুন নোট পাবেন না। আগামী মে মাসে বঙ্গবন্ধুর ছবি বাদ দিয়ে নতুন ডিজাইনের নোট বাজারে আসতে পারে বলে জানানো হয়েছে।
জানা গিয়েছে, ২, ৫, ১০, ২০, ৫০, ১০০, ২০০, ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোটের ডিজাইনের মধ্যে ঠিক করে কালি ও কাগজ কেনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সব প্রক্রিয়া শেষ করে সাধারণভাবে নতুন ডিজাইনের নোট বাজারে আসতে ৯ থেকে ১৮ মাস সময় লাগে। আওয়ামি লিগ সরকার পতনের পর শেখ মুজিবর রহমানের ছবি বাদ দিয়ে দ্রুততম সময়ে নতুন নোট বাজারে ছাড়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে বর্তমান অন্তবর্তী সরকার। গত বছরের আগস্ট মাসে শেখ হাসিনার পতনের পর পাঠ্যবই, হাসপাতাল, রাষ্ট্রপতি ভবন সব জায়গা থেকে সরেছে মুজিব ও হাসিনার ছবি। এবার কোপ পড়েছে দেশের মুদ্রায়।তবে জানা গিয়েছে, বাংলাদেশের বাজারে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি-সহ যে সব নোট রয়েছে, তার ব্যবহার অব্যাহত থাকবে।
টাকা ছাপানোর সঙ্গে যুক্ত এক আধিকারিক জানান, বিশ্বের মাত্র ৮–১০টি কারখানা থেকে ১৯০টি দেশ টাকা ছাপানোর কাগজ কিনে থাকে। ফলে চাইলেই হঠাৎ করে টাকার ডিজাইন পরিবর্তন করে নতুন নোট ছাপানো যায় না। এছাড়া কালি, ডাইস-সহ টাকা ছাপানোর সব সরঞ্জাম বিদেশ থেকে আনতে হয়। ফলে ডিজাইন পরিবর্তন করে নতুন নোট আনতে দুই বছর সময় প্রয়োজন। তবে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দ্রুত সময়ে নতুন নোট আনতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে টাকার নিরাপত্তার পাশাপাশি মানও বিবেচনায় রাখতে হচ্ছে।আগস্ট মাসে হাসিনা গদিচ্যুত হয়ে দেশ ছাড়ার পর থেকেই টাকার উপর থেকে বঙ্গবন্ধুর ছবি মুছে ফেলার দাবি তোলা হচ্ছিল। গত অক্টোবর মাসেই মুজিবের সরিয়ে নতুন নোট ছাপানোর উদ্যোগ নেয় ইউনূস সরকার। তারপর ডিসেম্বরে জানা যায় মুজিবের ছবি ছাড়াই ২০, ১০০, ৫০০ ও ১ হাজার টাকার নোট ছাপা হচ্ছে। ধর্মীয় কাঠামো, বাঙালি ঐতিহ্য এবং জুলাই বিদ্রোহের সময় আঁকা গ্রাফিতি অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে মুদ্রায়। কিন্তু সেই নোট ছাপার প্রক্রিয়া শেষ হয়নি।