ঠিক কী কারণে কিছু সংশ্লিষ্ট প্রজাতির কুকুর অন্যদের চেয়ে এতটা বেশি আক্রমণাত্মক হয়ে যাচ্ছে! ইদানিং কুকুরের হিংস্রতার খবর ভীষণ পরিমাণে সামনে আসছে। পশুপালন মন্ত্রক রটউইলার, পিটবুল সহ আরও ২৩ টি কুকুরের প্রজাতির বিক্রয় এবং প্রজনন নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। মন্ত্রক এই জাতগুলিকে 'হিংস্র' হিসাবে চিহ্নিত করেছে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, মূলত জিনগত বৈশিষ্ট্য নির্বিশেষে কুকুরের আচরণ প্রভাবিত হয়।
কুকুরের আচরণ এর জাতের উপর নির্ভর করে। বছরের পর বছর ধরে, মানুষ কুকুরের প্রজনন ও আন্তঃপ্রজনন করে এসেছে, তাদের কাজ অনুযায়ী প্রশিক্ষণ দিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, জার্মান শেপার্ড রক্ষক কুকুর হিসাবে এবং গ্রেহাউন্ডদের শিকারের জন্য প্রজনন করা হয়। প্রতিটি শাবক উত্তরাধিকারসূত্রে তার নিজস্ব কাজে পারদর্শী থাকে।
২০১৯ সালে পিএনএএস-এর একটি গবেষণায়, গবেষকরা ১০১টি কুকুরের জাতের মধ্যে মোট ১৩১টি জেনেটিক বৈকল্পিক পরীক্ষা করে দেখেছেন যে জেনেটিক পার্থক্যগুলি ১৪টি প্রজাতির বিভিন্ন আচরণের সাথে যুক্ত। গবেষকরা ৫০,০০০ টিরও বেশি কুকুরের মালিকদের থেকে ডেটা নিয়ে দেখেছেন যে উত্তরাধিকারী বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে প্রশিক্ষণ নেওয়ার যোগ্যতা, শিকার করার ক্ষমতা এবং অপরিচিতদের দেখলে আক্রমণাত্মক স্বভাব অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। অ্যারিজোনা ইউনিভার্সিটির জেনেটিসিস্ট এবং পশুচিকিত্সক ইভান ম্যাকলিন যদিও বলেছেন যে জেনেটিক্স কিছুই নয়। কুকুরের আচরণের নির্ভর করে প্রশিক্ষণের উপর।
কুকুরের আচরণ বিশেষজ্ঞ, যিনি দিল্লিতে কে নাইন নামক একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালান, তিনি জানিয়েছেন, এই ধরনের বেশিরভাগ পরিস্থিতি যা ঘটছে তা আসলে খারাপ প্রজনন সমস্যার ফলাফল। আসলে, মানুষ অনেক সময় কম পয়সায় কেনার জন্য না জেনে বুঝে অনিয়ন্ত্রিত ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কেনা হয়। এক্ষেত্রে অনেক সময় বাইরে থেকে দেখে বোঝা না গেলেও ওই কুকুরের জাত পাগলও হতে পারে।
অনেক সময় আবার বড় জাতের কুকুরগুলোকে কিনে এনে ঠিক মতো লালন পালন না করা হলেও, তাদের মাথা বিগড়ে যায়। যেমন খান এক্ষেত্রে পিট বুল এবং রটওয়েলারকে উল্লেখ করেছেন, তাঁর কথায়, উভয়ই নিষিদ্ধ তালিকায় রয়েছে এবং উভয়ই শক্তিশালী অ্যাথলেটিক জাত, যাদের প্রচুর ব্যায়ামের প্রয়োজন। এবার এদের আক্রমনাত্মক আচরণের ফল হতে পারে তখনই, যখন মানুষ এই জাতগুলিকে কিনে এনে একটি ছোট এলাকায় শো-অফ করার জন্য রেখে দেয়, তাদের প্রয়োজনীয় অনুশীলন দেয় না এবং কেবল বেঁধেই রাখে। তাই শেষ পর্যন্ত, এটি খারাপ লালন-পালনের কারণে অত্যন্ত হিংস্র হয়ে ওঠে। তাই এই জাতকে দোষারোপ করা যাবে না।
উল্লেখ্য, আগাগোড়াই পিট বুল এবং রটওয়েলাররা মানুষের উপর আক্রমণের ঘটনায় জড়িত। যেমন ২০১৮ সালে, লখনউতে একটি পিট বুল তার মালিককে হত্যা করেছিল।
এদিকে সরকারের নিষিদ্ধ তালিকায় জাপানি টোসা এবং আকিতার নাম রয়েছে। কিন্তু পাবলিক ডোমেইনের সাহিত্য পরামর্শ দেয় যে জাপানি আকিতায় মানুষের প্রতি আগ্রাসন খুব বিরল। এরা মূলত খুবই প্রভু ভক্ত হয়। এই আকিতার উপরই ভিত্তি করে নির্মিত হয়েছিল জাপানি চলচ্চিত্র হাচিকো মনোগাতারি (হাচিকো মোনোগাতারি)। যেখানে নিজের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত প্রায় ১০ বছর ধরে প্রতিদিন রেলস্টেশনে মালিকের ফিরে আসার জন্য অপেক্ষা করেছিল কুকুরটি। আবার বাস্তবে এই আকিতাই প্রতিবেশীর সন্তানকে কামড় দিয়েছিল। সবটাই ওই প্রজনন সমস্যা ও পর্যাপ্ত লালন-পালনের অভাবের কারণে ঘটে।