সেটা ছিল ২০১১ সাল, আর দিনটা ২১ জুলাই। হ্য়াঁ, তৃণমূলের শহিদ দিবস। সেবার সেই অনুষ্ঠানে 'পাগলু ডান্স' গেয়ে বসেছিলেন দেব। আর সেই ভুলের জন্য ২০২৫-এ এসেও আজও ট্রোল হতে হয় সুপারস্টারকে। ৮ জানুয়ারি, বুধবার স্টুডেন্টস উইক সমাপনী অনুষ্ঠানে সেই স্মৃতির সরণীতে নেমে, সেই বিড়ম্বনার সাফাই দিলেন দেব।
কী বললেন দেব?
লাজুক হাসিতে মঞ্চে উঠে, দেব বললেন, 'এই গান নিয়ে একটা ইতিহাস আছে, আমার জীবনে। আমার খুব মনে আছে, আমি তখন একদমই নতুন। ২০১১ সালে শহিদ দিবসে ভুল করে 'পাগলু' গানটা গেয়েছিলাম। তখন বুঝিনি যে এই জায়গায়, এই মঞ্চে…। সেটা নিয়ে আমি আসলে কোনওদিনও কথা বলে উঠতে পারিনি। তবে ওইদিন আমি আসলে পাগলু গানটা গাইনি। সেদিন সেখানে উপস্থিত হাজার হাজার মানুষ আসলে ‘পাগলু’ গানটা গেয়েছিলেন। তাঁরাই বলেছিলেন ওই গানটা গাইতে। আজ আবার সেই দিন। তবে আমি গান গাইতে পারব না। কারণ, সবাই যেভাবে জমিয়ে রেখেছে…।
এরপর ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশ্যে দেব বলেন, ‘আমি আসলে আপনাদের খুব বেশি জ্ঞান দিতে চাইব না। আজকে একটা বিশেষ দিন। মুখ্যমন্ত্রীকে এভাবে কাছ থেকে পাওয়া সৌভাগ্যের বিষয়। আমরা এভাবে CM-কে পাইনি। আমার পড়াশোনা, ইঞ্জিনিয়ারিং সবই বোম্বে, পুনে থেকে হয়েছে। আমরা সত্য়িই এমন CM পাইনি।’
দেব আর আগের দেব নেই। এখন তিনি বেশ পরিণত, সুপারস্টার আবার পরিপক্ক রাজনীতিবিদ্। আর তাই এদিন বারবার বুদ্ধি করে গান গাওয়া এড়িয়ে যেতে চাইলেন। তবে ঠিক তখনই ইন্দ্রনীল সেন বলে উঠলেন, ‘আরে তুই এটা গা না…কে তুমি নন্দিনী, ওটা তুই ভালো গাস।’ দেব উত্তরে বললেন, ‘আরে আমি কখন গাইলাম!’ এই কথা বার্তার মাঝেই ইন্দ্রনীল সেন কিউ ধরালেন দেবকে, বললেন, ‘এবার তুই গা…।’ দেব পাল্টা তাঁকে কাছে ডাকলেন, ‘তুমি এখানে এসো না…।’
ইন্দ্রনীল অবশ্য যেতে নারাজ, তিনি দেবকে দিয়ে গান গাওয়াতে বদ্ধ পরিকর। তবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়ের কথায় তিনি দেবের কাছে গেলেন, গাইলেন। তবে এবারও বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে গান গাওয়ার অ্যাক্টিং করে শুধুই লিপ দিলেন। গান গাওয়ার ভুল মোটেও করতে চাইলেন না। ইন্দ্রনীল বললেন, ‘আরে ফলস মারছে..।’ হেসে দেবের উত্তর, ‘আরে আমি জানি না তো…।’
এবার তাঁকে পাল্টা বলা হল, ‘আচ্ছা ঠিক আছে তোকে গাইতে হবে না, ও একটু হেঁটে যাক, সেটাই দারুণ কোরিওগ্রাফি হবে।’ তবে সুপারস্টার অবশ্য তাতেও নারাজ। এবার তিনি ২০১১-র মতো আর কোনও ভুল করতেই চাননা। কারণ, এখন তিনি নতুন নয়, অনেক পরিণত।
এরপর ইন্দ্রনীলকে ধন্যবাদ জানিয়ে ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশ্যে দেবে বার্তা, ‘যদি আরেকবার সুযোগ পাই আমি জীবনের পুরনো পাতাকে যদি খুলতে চাই, তাহলে বলব স্টুডেন্ট লাইফটাকে ফিরে পেতে চাই। কারণ, এই সময়টাতে হয়ত টিচার, গার্জেনদের উপর রাগ হত। তবে এখন ভাবি, যদি আরেকটু মন দিয়ে পড়াশোনা করতাম, তাহলে হয়ত আরও ভালো মানুষ হতাম। এই একটা সময় যখন অনেক রাগ হবে, হিংসে হবে অন্যের উপর। মনে হবে, ও কেন ফার্স্ট হল, আমি কেন ফেল করলাম! তবে এই সময়টা খুব গুরুত্বপূর্ণ, এই ১০-১৬/১৮ বছর আর ফিরে আসে না। জীবনে অনেক সময় আসবে, তবে এটা আর ফিরে আসবে না। যতটা পারবে পড়াশোনা করবে, কারণ, এটা আর ফিরবে না। এই সময়টাতে বাবা-মায়ের কথা শুনলে, টিচাররদের কথা শুনলে জীবনে লাভবান হবেন, আপনারাও একদিন এই জায়গায় পৌঁছবেন (মঞ্চের দিকে দেখিয়ে) আমরা সেদিন কোথায় থাকব জানি না, হয়ত উপরে থাকব! তবে এটাই হচ্ছে আসল বয়স।'
দেব এবার থামলেন, তবে ফের এল গান গাওয়ার অনুরোধ। স্টুডেন্টদের তরফেও অনুরোধ এল। দেব পাল্টা বললেন, ‘কিশোরী কারোর মনে আছে? আমার না সত্য়িই কিছু মনে আসছে না CM-এর সামনে মাথা কাজ করছে না।’ এরপরই অনুরোধ এল খোদ মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে, বললেন, ‘এই তুমি যা পারো গাও না…।’
এবার আর দেব পালাতেন কীভাবে! বললেন, ‘এমন একটা গান আমার এই মুহূর্তে মাথায় আসছে, আমি যদি গাই, তাহলে আজ রাত থেকে নয়, এই মুহূর্ত থেকে ট্রোল হতে শুরু করব…।’ এরপর দেব গাইলেন, ‘ও মধু ও মধু, আই লাভ ইউ ইউ…।’