২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর ভারতীয় দলের কোচ হিসেবে রাহুল দ্রাবিড়ের পরিবর্ত কে হবেন? উঠে আসছে বহু নাম। তার মধ্যে এই দৌড়ে রয়েছেন কলকাতা নাইট রাইডার্সের মেন্টর গৌতম গম্ভীরও। আসলে এবারের আইপিএল মরশুমে কলকাতা নাইট রাইডার্সের দুরন্ত পারফরম্যান্সের পরেই গম্ভীরকে নিয়ে জল্পনা তীব্র আকার নিয়েছে।
জয় শাহের ইঙ্গিতে গম্ভীরকে ঘিরে জল্পনা
শুক্রবার বিসিসিআই সেক্রেটারি জয় শাহ একটি বিবৃতি বলেছে যে, বোর্ড কখনও-ই কোনও অস্ট্রেলিয়ানকে কোচের পদের জন্য প্রস্তাব দেয়নি বা যোগাযোগও করেনি। তিনি এমনও ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, বোর্ড একজন ভারতীয় কোচেরই সন্ধান করছে। যে কারণে গম্ভীরের নাম আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছে।
জয় শাহ এমনও ইঙ্গিত করেছেন যে, নতুন কোচ হিসেবে যদি ভিভিএস লক্ষ্মণকে না পাওয়া যায়, যিনি ন্যাশনাল ক্রিকেট অ্যাকাডেমির দায়িত্বে আছেন, তবে এই জায়গায় এমন একজন ভারতীয়কে নিয়ে আসা হবে, যিনি জানেন যে, এই সিস্টেমটি কী ভাবে কাজ করে। যদি ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলি মারফৎ জানা গিয়েছে, বোর্ডের কাছ থেকে এখনও গম্ভীরের কাছে কোনও আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব আসেনি, তবে এটি যদি আসে তবে প্রাক্তন ভারতীয় ওপেনার সম্ভবত এটি গ্রহণ করবেন। সূত্রের দাবি, ‘গম্ভীর এমন ধরণের চরিত্র, যিনি কখনও চ্যালেঞ্জ নিতে পিছপা হন না।’
কেকেআর মেন্টরের নাম কেন এগিয়ে রয়েছে?
গম্ভীর বর্তমানে কেকেআর-এর মেন্টর এবং কলকাতার এই ফ্র্যাঞ্চাইজি দল তাঁকে এই মরশুমের সাফল্যের পরে ছাড়বেন কিনা, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। তবে একটি প্রশ্ন তো থাকছেই, গম্ভীর কখনও কোনও জুনিয়র বা ঘরোয়া দলের কোচিং করাননি, তবে কীসের ভিত্তিতে তাঁকে ভারতীয় দলের দায়িত্ব দেওয়া হবে? গম্ভীর কিন্তু সোজাসাপ্টা কথা বলতে আগ্রহী, যেটা ভারতীয় ড্রেসিংরুমের সুপারস্টারদের হজম নাও হতে পারে।
ভারতের প্রাক্তন পেসার লক্ষ্মীপতি বালাজি, যিনি ২০১১-১৩ সালের কেকেআর দলের প্রধান লেফটেন্যান্ট ছিলেন, টাইমস অফ ইন্ডিয়াকে বলেছেন, ‘অধিনায়ক হিসেবে গৌতি অসাধারণ। সম্ভবত একজন কোচ হিসেবেও ও ভালো করবে। ও পরিসংখ্যান নিয়ে ভাবে না। ও সব সময়ে ছোট ছোট অবদানকে পুরস্কৃত করে। একবার কেকেআর অধিনায়ক হিসেবে, ও ওর ম্যান অফ দ্য ম্যাচ পুরস্কারটি বাংলার এক খেলোয়াড়কে দিয়েছিলেন। সিএসকে-এর বিরুদ্ধে ক্যামিও ইনিংস খেলার জন্য দেবব্রত দাসকে তিনি নিজের পুরস্কার দিয়ে দিয়েছিলেন।’
রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে দেওয়া একটি সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারে গম্ভীর বলেছিলেন, ‘আমরা বড় বড় নামের পিছনে বা ঘটনার পিছনে ছুটি। তবে ছোট ছোট অবদানগুলো মনে রাখাও গুরুত্বপূর্ণ। ২০১১ সালের ওডিআই ফাইনালে জহির খানের প্রথম স্পেলটি নিয়ে কেউ কথা বলে না, যখন ও পাঁচ ওভারে ছয় রান দিয়েছিল। এই অবদানগুলি আমাদের মনে রাখা প্রয়োজন।’ অর্থাৎ গম্ভীরের কাছে ব্যক্তির পারফরম্যান্স নয়, টিম গেমই গুরুত্বপূর্ণ। প্রসঙ্গত, এই মরশুমে নাইট রাইডার্স কিন্তু টিম গেমই খেলছে। কেকেআর-এর মেন্টর হিসেবেও তিনি এই দর্শনে অটল রয়েছেন। যদিও সুনীল নারিন, ফিল সল্ট বা আন্দ্রে রাসেলেরা লাইমলাইটে রয়েছেন। তবে গম্ভীর সব সময়ে বেঙ্কটেশ আইয়ার, বৈভব অরোরা বা হর্ষিত রানাদের নানা ভাবে উৎসাহিত করে চলেছেন।
আরও পড়ুন: IPL-এর নির্দিষ্ট একটি প্লে-অফের ম্য়াচে ওপেন করার পাশাপাশি উইকেটও নিলেন, ইতিহাস লিখলেন অভিষেক শর্মা
২০১২ সালের আইপিএল ফাইনালে দু'বারের চ্যাম্পিয়ন সিএসকে-র বিপক্ষে বালাজি চোট পেলে, ব্রেন্ডন ম্যাকালামের মতো সুপারস্টার ওপেনারকে বাদ দিয়েছিলেন গম্ভীর। তিনি তাঁর জায়গায় স্বল্প পরিচিত উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান মানবিন্দর বিসলাকে খেলান, যাতে ব্রেট লি একজন অভিজ্ঞ বিদেশি পেসার হিসেবে দলে থাকতে পারেন। মনবীর কিন্তু সেই ম্যাচে গম্ভীরকে নিরাশ করেননি। ৪৮ বলে তিনি ৮৯ রান করেছিলেন।
গম্ভীরের এই বিচক্ষণতা এবং সাহসী সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ হয়েছে বহু ক্ষেত্রেই। এই বছরের আইপিএলেই যেমন ২৪.৭৫ কোটি টাকা দিয়ে মিচেল স্টার্ককে কেনে কেকেআর। এবং স্টার্ককে নেওয়ার ক্ষেত্রে গম্ভীরের বড় হাত ছিল। কিন্তু আইপিএলের লিগ পর্বে অজি তারকার পারফরম্যান্স নিয়ে সমালোচনার ঝড় বয়ে গিয়েছে। তবে গম্ভীর কিন্তু স্টার্কের পাশ থেকে সরে দাঁড়াননি। তাঁর উপর ভরসা করে গিয়েছেন। যার ফল বড় মঞ্চে পেয়েছে কেকেআর। কোয়ালিফায়ার ওয়ানে স্টার্কের প্রথম স্পেলেই সানরাইজার্স হায়দরাবাদ ব্যাকফুটে চলে গিয়েছিল। পাওয়ার প্লে-তে ৩ ওভার বল করে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট তুলে নিয়েছিলেন স্টার্ক। ঠিক এভাবে এমএস ধোনি ২০১৮ সালের আইপিএলে শেন ওয়াটসনের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। এবং যার ফল চেন্নাই সুপার কিংস পেয়েছিল।