এমনিতেই বিদেশ সফরে বাংলাদেশের পারফর্ম্যান্স কখনই আহামরি ছিল না। তাই সব অ্যাওয়ে সিরিজই বাংলাদেশের কাছে নিতান্ত কঠিন। তার উপর এবার যে পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল পাকিস্তান সফরে খেলতে গিয়েছে, তা মোটেও খেলার জন্য অনুকূল নয়।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ও দেশের রাজনৈতিক পালাবদল যে রকম অস্থিরতা তৈরি করে বাংলাদেশে, তাতে ক্রিকেট নিয়ে ভাবনাচিন্তার উদয় হওয়াই মুশকিল। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডেও ডামাডোল দেখা যায়। নির্বিঘ্নে অনুশীলনের জন্য আগেভাগে পাকিস্তানে উড়ে যেতে হয় বাংলাদেশ দলকে।
তার উপর পাকিস্তান সফরে প্রথম টেস্ট চলাকালীন বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের ব্যথিত করে দেশের বন্যাদুর্গত মানুষদের অবস্থা। এমন মানসিক প্রতিবন্ধকতা দূরে সরিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল পাকিস্তান সফরে ইতিহাস গড়ে। তারা রাওয়ালপিন্ডির প্রথম টেস্টে ১০ উইকেটে পরাজিত করে পাকিস্তানকে।
জয়ের ব্যবধান এখানে গৌণ। আসল কথা হল এই প্রথম টেস্টে পাকিস্তানকে হারাল বাংলাদেশ। এমন ইতিহাস গড়া ম্যাচে বাংলাদেশের হয়ে দুর্দান্ত পারফর্ম্যান্স মেলে ধরেন অনেকেই। তবে তাঁদের মধ্যে অভিজ্ঞ মুশফিকুরের অবদান আলাদা করে স্বীকার করতেই হয়।
ঘাড়ের উপর বিরাট রানের বোঝা নিয়ে পালটা ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশের ইনিংস ভেঙে পড়েনি মুশফিকুরের জন্যই। প্রথম ইনিংসে পাকিস্তানের ৬ উইকেটে ৪৪৮ রানের জবাবে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশ তুলে ফেলে ৫৬৫ রান। ১১৭ রানের মূল্যবান লিডটাই এক্ষেত্রে ম্যাচের নিয়ন্ত্রক হয়ে দাঁড়ায়।
মুশফিকুর রহিম ২২টি চার ও ১টি ছক্কার সাহায্যে ৩৪১ বলে ১৯১ রানের অবিশ্বাস্য ইনিংস খেলে সাজঘরে ফেরেন। নিশ্চিত দ্বিশতরান হাতছাড়া করলেও মুশফিক জিতে নেন ম্যাচের সেরা ক্রিকেটারের পুরস্কার। এক্ষেত্রেও মানবিকতার পরিচয় দিয়ে মুশফিক এমন এক কাজ করেন, যা কুর্নিশ আদায় করে নেয় নেটিজেনদের। মুশফিকুর তাঁর ম্যান অফ দ্য ম্যাচের পুরস্কার মূল্য দান করেন বাংলাদেশের বন্যাত্রাণে। সেই সঙ্গে দেশবাসীর কাছে আবেদন জানান বন্যাদুর্গতদের পাশে থাকার।
ম্যান অফ দ্য ম্যাচের পুরস্কার হাতে নিয়ে মুশফিকুর বলেন, ‘এখনও পর্যন্ত এটি আমার অন্যতম সেরা পারফর্ম্যান্স। কেননা আমরা বিদেশে সত্যিই ভালো কিছু করে দেখাতে পারিনি। দলগতভাবে আমাদের লক্ষ্য থাকে যে, এমন জায়গায় পারফর্ম করে দেখাও, যেটা সবার চোখে লাগবে। বিশেষ করে বিদেশে নিজেদের ব্যাটিংয়ে কীভাবে উন্নতি করা যায়, সর্বদা সেই চেষ্টা থাকে আমাদের। সুতরাং, শুধু আমার নয়, এই জয়ের জন্য কৃতিত্ব প্রাপ্য সবার।’
শেষে মুশফিকুর বলেন, ‘আপনারা জানেন বাংলাদেশে বহু মানুষ এই মুহূর্তে বন্যাদুর্গত। আমি এই প্রাইজ মানি বন্যাত্রাণে দান করতে চাই। দলের তরফে আমার দেশবাসীর কাছে আবেদন রইল, আপনারা এগিয়ে এসে পাশে থাকার চেষ্টা করুন বন্যা কবলিত অঞ্চলের মানুষজনের।’
উল্লেখ্য, মুশফিকুর রহিম রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে প্লেয়ার অফ দ্য ম্যাচ হওয়ার সুবাদে ৩ লক্ষ পাকিস্তানি রুপি পুরস্কার পান।