পানাগড়ে গাড়ি উলটে তরুণীর মৃত্যুর ঘটনায় ক্রমে আরও জোরালো হচ্ছে পুলিশের তত্ত্ব। প্রাথমিকভাবে দাবি করা হয়েছিল যে একদল মত্ত যুবকের গাড়ির তাড়া খেয়েই নাকি উলটে গিয়েছিল নিহত সুতন্দ্রা চট্টোপাধ্যায়দের গাড়ি! এখন শোনা যাচ্ছে, আদতে তেমন কিছুই ঘটেনি! বরং, যেটা ঘটেছে, সেটাকে ওই প্রাথমিক দাবির একেবারে উলটো বলা যেতে পারে।
একথা বলা হচ্ছে - কারণ - আজই (শুক্রবার, ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫) সুতন্দ্রাদের সেই দুর্ঘটনাগ্রস্ত নীল গাড়ির চালক যে নয়া দাবি করেছেন, তা এককথায় বিস্ফোরক। রাজদেও শর্মা নামে ওই ব্যক্তি জানিয়েছেন, তাঁদের গাড়িকে তথাকথিত মত্ত যুবকদের সেই সাদা গাড়িটি মোটেও তাড়া করেনি! বরং, সুতন্দ্রাদের নীল গাড়িই ওই সাদা গাড়িকে তাড়া করেছিল!
এই ঘটনা যে ঘটেছিল, সেই দাবি পুলিশ আগেই করেছিল। রীতিমতো সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ করে পুলিশ তাদের দাবির স্বপক্ষে প্রমাণও পেশ করেছিল। আর, এবার নীল গাড়ির চালক দাবি করলেন, তিনি গাড়ির গতি বাড়িয়েছিলেন 'ম্য়াডামের নির্দেশে', তিনি সাদা গাড়িকে তাড়া করেছিলেন 'ম্য়াডামের নির্দেশে'! এবং তাঁদের গাড়ি উলটে গিয়েছিল, কারণ - সেই সময় গাড়ির গতি ছিল ঘণ্টায় প্রায় ১০০ কিলোমিটার এবং নীল গাড়ির চালক নিজেই অত দ্রুত গতির গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি।
একইসঙ্গে, ওই চালক জানিয়েছেন, তিনি অন্তত ওই সাদা গাড়ি থেকে কাউকে ম্যাডামকে লক্ষ করে অশালীন ইঙ্গিত করতে বা ইভটিজিং করতে দেখেনি। তবে, একথা ঠিক যে ওই গাড়ি একবার তাঁদের গাড়িতে ধাক্কা দিয়েছিল। তারপরই 'ম্যাডাম বলেন' ওই সাদা গাড়িটিকে তাড়া করতে এবং সাদা গাড়ির চালক একবার নাকি নীল গাড়িরে যাত্রীদের দিকে শুধু তাকিয়ে ছিলেন!
রাজদেওকে উদ্ধৃত করে এই প্রসঙ্গে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে লেখা হয়েছে, 'ওই সাদা গাড়িটা আমাদের গাড়িতে প্রথমে ধাক্কা দিয়েছিল। তখন ম্যাডামই বলেছিল ওই গাড়িটার পিছনে ধাওয়া করতে। সাদা গাড়িটাকে দাঁড় করাতেও বলেছিল ম্যাডাম। আমি সেই চেষ্টাই করছিলাম। এগিয়েও গিয়েছিলাম। কিন্তু ওদের গাড়িটা দাঁড় করাতে পারিনি। এরপর জাতীয় সড়ক ছেড়ে লোকাল রোডে নেমে যায় ওদের গাড়িটা। ম্যাডামের কথায় আমিও লোকাল রোডে গাড়ি নামাই। গাড়ির গতিবেগ প্রায় ১০০ ছিল। আমি সামলেই নিতাম। কিন্তু ওই টয়লেটটায় ধাক্কা লেগে উল্টে গিয়েছিল আমাদের গাড়িটা।'
সুতন্দ্রার গাড়ির চালকের এই বয়ান সামনে আসায় স্বাভাবিকভাবে পুরো বিষয়টাই বদলে যাচ্ছে। কিন্তু, কথা হল, তাহলে প্রথমে কেন ইভটিজিংয়ের তত্ত্ব খাড়া করলেন সুতন্দ্রার গাড়িতে থাকা অন্যরা? বিষয়টি নিয়ে নিজের বিভ্রান্তি প্রকাশ করেছেন সুতন্দ্রার মা তনুশ্রী চট্টোপাধ্যায়ও। তাঁর দাবি, পুলিশ তদন্ত করে যেন প্রকৃত ঘটনা সামনে আনে এবং যিনি বা যাঁরাই তাঁর মেয়ের মৃত্যুর জন্য দায়ী হোন না কেন, তাঁরা যেন আইন মাফিক শাস্তি পান।