দিল্লির এক নামী কলেজেই স্নাতকস্তরে ইংরেজি পড়ার ইচ্ছে ছিল উত্তরবঙ্গের কালিম্পংয়ের বাসিন্দা ১৯ বছর বয়সী অনিল থাপার। তবে করোনা মহামারীতে তাকে দার্জিলিংয়ের এক সরকারি কলেজেই আবেদন করতে হয়েছে। দার্জিলিংয়ের এক বিখ্যাত ইংরেজি মাধ্যম স্কুল থেকে দ্বাদশ শ্রেণিতে পাস করে অনিল। আক্ষেপের সুরে সে বলছিল, ‘আমার স্বপ্ন ছিল যে একদিন আমি দিল্লিতে গিয়ে ইংলিশ অনার্স এবং পরে জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করব। কিন্তু এই মহামারীর জন্য এখন আমাকে দার্জিলিংয়ের এক সরকারি কলেজে পড়াশোনা করতে হচ্ছে।’শুধু অনিল থাপা একমাত্র নয়, এই বছর দার্জিলিং ও কালিম্পংয়ের পাহাড়ি এলাকার অনেক কলেজে ভর্তি হতে প্রচুর উৎসাহ দেখা যাচ্ছে পড়ুয়াদের মধ্যে। কারণ, করোনা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে এলাকার ছাত্রছাত্রীরা এবার স্থানীয় কলেজগুলিতেই ভর্তি হতে চাইছে।দার্জিলিং সরকারি কলেজের অফিসার ইনচার্জ প্রজ্জ্বলচন্দ্র লামা বলেছিলেন, ‘অন্যান্য সময় পাহাড়ের অনেক পড়ুয়া এখানে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে মার্কশিট হাতে পাওয়ার পরই ভিনরাজ্য বা কলকাতা–সহ দক্ষিণবঙ্গে পাড়ি দেয়। সেখানে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন ডিগ্রি কোর্স বা হোটেল ম্যানেজমেন্টের মতো নানারকম পেশাদার কোর্সে ভর্তি হয়ে যায় তারা। কিন্তু এ বছর ছবিটা একেবারে আলাদা। বেশিরভাগ পড়ুয়াই এবার স্থানীয় কলেজগুলিতে ভর্তির আবেদন করেছে।’আর এই পরিস্থিতিতে গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জিটিএ) পাহাড়ের কলেজগুলিতে আসন সংখ্যা বাড়ানোর জন্য উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে। দার্জিলিং ও কালিম্পং মিলিয়ে প্রায় ১৩টি রাজ্য সরকারি বা সরকারি সুবিধাপ্রাপ্ত কলেজ রয়েছে। মোট ১৮২৫টি আসন রয়েছে দার্জিলিং সরকারি কলেজে। অন্য বছর যেখানে কমবেশি ২ হাজার আবেদন জমা পড়ে এবার সেই কলেজে ভর্তির আবেদন জমা পড়েছে প্রায় ৫ হাজার। স্নাতকস্তরে শুধু ইংরেজি পড়তে ৬৬টি আসনের জন্য আবেদন জানিয়েছেন ১২০০ পড়ুয়া।দার্জিলিংয়ের জনপ্রিয় মেয়েদের কলেজ সাউথফিল্ড কলেজের অধ্যক্ষা অনুরাধা রাই বলছিলেন, ‘এ বছর কলেজের মোট ৩৫১ আসনের জন্য ৭০০টি আবেদন পেয়েছি আমরা। এখন আমাদের স্নাতকস্তরে নেপালি কোর্সের মাত্র ৫টি আসন এবং পাস কোর্সের ১৩টি আসন খালি রয়েছে। কলেজের পরিকাঠামোর দিকে নজর রেখে আমাদের পক্ষে আর আসন বাড়ানো সম্ভব নয়।’তবে সব কলেজেরই হাল এমন নয়। কিছু কিছু কলেজে এখনও কিছু আসান ফাঁকা রয়েছে। ঘুম জোড়বাংলো কলেজের অধ্যক্ষ মিলন তামাং বলেন, ‘কিছু কলেজ রয়েছে যেখানে এখনও পড়ুয়াদের জন্য অনেক আসন ফাঁকা রয়েছে এবং একইরকম ভাল শিক্ষক সে সব কলেজেও রয়েছে।’ উল্লেখ্য, সরকারের তরফ থেকে রাজ্যের সর্বত্র কলেজে ভর্তির তারিখ ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত বাড়িয়েছে। জিটিএ–র পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান অনিত থাপা বলেছেন, ‘কলেজে ভর্তির কোনও সমস্যা থাকলে তা দ্রুত সমাধান করার জন্য আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি।’